মধ্যরাত থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া দেশে প্রবেশ নিষেধ
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে করোনাভাইরাসের নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্সের যাত্রী দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি কোনো এয়ারলাইন্স সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, আজ (শুক্রবার) রাত ১২টা ১মিনিট থেকে করোনামুক্ত সনদ ছাড়া বিশ্বের কোনো যাত্রী দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তিনি আরও জানান, গত ৩০ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া প্রবেশে কঠোর মনিটরিং ছিল। ৯০ শতাংশ যাত্রী সনদ নিয়েই আসতো। কিন্তু ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে করোনা নেগেটিভ সনদ আনার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আসার আগে সব যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষায় তাদের করোনা ‘নেগেটিভ’ এলে তবেই তারা বাংলাদেশে আসার অনুমতি পাবেন। বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেই মেডিকেল সনদ দেখাতে হবে।
শুধু তাই নয়, বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষাসহ মেডিকেল স্ক্রিনিং হবে। কারও মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা গেলে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাকে সরাসরি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেয়া হবে এবং আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হবে। যাদের মধ্যে উপসর্গ থাকবে না, তাদের বাড়ি ফিরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যাদের বিএমইটি কার্ড আছে, তারা যে দেশ থেকে আসবেন সে দেশের পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজলভ্য না হলে অ্যান্টিজেন বা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক মিশনগুলোর কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সনদ থাকতে হবে এবং সেই পরীক্ষা করাতে হবে যাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদেরও বাংলাদেশে আসতে হলে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে। কিন্তু ভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাদেরও পরবর্তী পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতালে পাঠানো হবে।
বিমানবন্দরে কর্মরতদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ছাড়াও যাত্রী, ক্রু, উড়োজাহাজ জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে করারও নির্দেশ দিয়েছে বেবিচক।
বাহরাইন, চীন, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য গন্তব্যে এখন সরাসরি ফ্লাইট নেই। সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, দুবাই, আবুধাবি, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্যে ট্রানজিট হয়ে যাত্রীরা এসব গন্তব্যে যাওয়া-আসা করেন। ফলে এ নির্দেশনা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য গন্তব্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
তবে শিডিউল বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছাড়া রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ত্রাণ, মানবিক সাহায্য, প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত আনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কূটনৈতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯১ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ হাজার ৭৭২ জন।
এমইউ/এসজে/জেএইচ/পিআর