চবির ৯ শিক্ষককে টিকা দিতে প্রশাসনের বিশেষ তদবির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক সংখ্যা ৯০৭ জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধুমাত্র বর্তমান ছয়জন ও সাবেক তিন শিক্ষককে করোনা টিকা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিঠি দিয়েছে। গত রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চিঠি দিয়ে ওই নয় শিক্ষককে করোনা টিকা গ্রহণে সহযোগিতা করতে চমেক হাসপাতাল পরিচালককে অনুরোধ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। শুধুমাত্র প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের বিশেষ সুবিধা দিতে চমেক পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারা।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‘এই চিঠিতে অবসরপ্রাপ্ত তিনজনের নাম রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গেছেন ১০-১২ বছর আগে। অন্যদিকে বর্তমানে কর্মরত যাদের নাম চিঠিতে রয়েছে, তারা সকলেই অপেক্ষাকৃত তরুণ। তাদের চাইতে সিনিয়র কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ জন শিক্ষক আছেন। অথচ প্রশাসনের চোখে এই শিক্ষকরাই বয়োজ্যেষ্ঠ। সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত না করে শুধুমাত্র প্রশাসনের সঙ্গে যাদের সখ্য, তাদের অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছে।’

চবি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই চিঠি থেকে জানা যায়, টিকা প্রদানের জন্য সুপারিশ করা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে আছেন ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন, ড. আসমা সিরাজ উদ্দিন ও ড. আব্দুস ছালাম।

বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সিন্ডিকেট সদস্য ড. মঈনুল হক মিয়াজী, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দিন, আইসিটি সেলের পরিচালক খায়রুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও সাবেক প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলা ও বর্তমান প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। এ শিক্ষকরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনপন্থী হিসেবে পরিচিত।

তাদের মধ্যে প্রফেসর ড. রহমান নাসিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে হেয়প্রতিপন্ন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযোগ তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহজে কয়েকজনকে টিকা পাইয়ে দিতে তদবির করছে। সেটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত প্যাডে। তাহলে বাকি ৯০২ শিক্ষকের কী দোষ? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে কি চমেক পরিচালককে সকল শিক্ষকের জন্য চিঠি দিতে পারত না? এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের বৈষম্যমূলক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘এই নয় শিক্ষকের জন্য আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিঠি দিয়েছি। তাদের বয়স এবং করোনা ঝুঁকি বিবেচনা করে এ সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি শিক্ষকদেরও করোনা টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য একটি চিঠি আমরা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি।’

রাষ্ট্রপতিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তির ঘটনায় অভিযুক্ত প্রফেসর ড. রহমান নাসিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ইউজিসি তদন্ত করছে। তবে আমরা তদন্তের বিষয়ে কিছু জানিনা।’

এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।