প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিল ‘জিনের বাদশা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, ১০ মার্চ ২০২১

জিনের বাদশা পরিচয়ে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা ও সাদা কাগজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা তৈরি করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করত একটি চক্র। এ বিশ্বাস অর্জনের পর ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. তারিকুল ইসলাম (৪০) (জিনের বাদশা), মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস (৩৩), মো. আল মাসুম (২৮) ও মো. সাইদুল ইসলাম রাজু (৩০)।

অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ভুক্তভোগী মো. আব্দুল খালেক খানের স্ত্রী ও সন্তান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে পরিচয় হয় জিনের বাদশা তারিকুল ইসলামের সঙ্গে। যোগাযোগের একপর্যায়ে জিনের বাদশা খালেককে বলেন, সে চিকিৎসা করতে পারবে। এজন্য জিনের বাদশা পরিচয়ে সে কিছু ওষুধ দেয়। এরপর যে কোনোভাবে খালেকের স্ত্রী-সন্তান কিছুটা সুস্থ হয়। সুস্থ হওয়ার পরে জিনের বাদশার প্রতি খালেকের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়।

jin

তিনি আরও জানান, এরপর প্রতারক জিনের বাদশা খালেককে বলেন, যত টাকা দরকার ততো টাকা জিনের বাদশা তৈরি করে দিতে পারবেন। প্রমাণ হিসেবে জিনের বাদশা খালেকের সামনেই একটি বালতির মধ্যে রাখা সাদা কাগজে ১ হাজার টাকার একটি চকচকে নোট তৈরি করে দেয়। আরও বেশি বিশ্বাসের জন্য খালেক জিনের বাদশাকে বলেন, এটা তো নতুন নোট আপনি কিছু পুরোনো টাকা তৈরি করে দেখান। এরপর সে ওই বালতির মধ্যে কিছু পুরোনো টাকা তৈরি করে দেখায়। ম্যাজিকের মতো এমন ঘটনা দেখে খালেকের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, খালেকের চাহিদা অনুযায়ী ৬ কোটি টাকা জিনের বাদশা তৈরি করে দেবে। এক্ষেত্রে একটি শর্তজুড়ে দেয় জিনের বাদশা। শর্ত অনুযায়ী পৃথিবীর সব মসজিদে কোরআন শরিফ কিনে দিতে হবে। কোরআন শরিফগুলো কিনতে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা লাগবে। তার কথায় বিশ্বাস করে বাজার থেকে ছয় কার্টন এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ কিনে আনেন খালেক। কাগজ কিনে আনার পর জিনের বাদশা বলেন, আপনারা যতদিন কোরআন শরিফ কেনার জন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা দিতে পারবেন না, ততো দিন কার্টনটি খোলা যাবে না। এ কথায় বিশ্বাস করে আব্দুল খালেক কার্টনটি নিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দেন।

brief.jpg

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিনের বাদশার এমন প্রলোভনে আব্দুল খালেক দফায় দফায় এক কোটি ১৩ লাখ টাকা জিনের বাদশাকে দেন। খালেকের পরিচিত একজন আরও ৫৩ লাখ টাকা দেন। এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা থেকে আরও দুই লাখ টাকা বাকি থাকে। তাদের বাকি দুই লাখ টাকা দেয়ার জন্য জিনের বাদশা চাপ দিতে থাকেন।

‘একপর্যায়ে খালেকের সন্দেহ হতে থাকে। আসলেও এই কার্টনে এত টাকা আছে কি-না। এমন সন্দেহে খালেক কার্টনটি খুলে দেখে টাকা তো দূরের কথা, তার কেনা সাদা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। এ সময় প্রতারক চক্রটি ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে বাকি দুই লাখ টাকা এসএ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। প্রতারক চক্রের বিষয়ে ভুক্তভোগী সিআইডিতে অভিযোগ দিলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম এর একটি টিম ফাঁদ পেতে তাদের গ্রেফতার করে’- বলে জানান তিনি।

গ্রেফতারদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, দুটি ভেকু, টাকা তৈরির সাদা কাগজসহ বাক্স, মাজারের মাটি, লাল কালিতে আরবি লেখা কাগজ জব্দ করা হয়।

টিটি/এএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।