গণপরিবহনে সবকিছুই আগের মতো, বেড়েছে শুধু ভাড়া
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। গত ৩১ মার্চ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য কার্যকর হয়েছে এই বর্ধিত ভাড়া। কথা ছিল, গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। একই সঙ্গে যাত্রীদের সবাইকে শতভাগ মাস্ক পরিধান করতে হবে। আবার প্রত্যেক গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
তবে এত নির্দেশনার মধ্যে শুধু ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো নিয়ম-কানুন মানতে দেখা যাচ্ছে না চট্টগ্রামের গণপরিবহনগুলোকে। বুধবার (৭ এপ্রিল) সরেজমিন চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, জিইসি, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, নিউমার্কেট ও কাজির দেউরি ঘুরে গেছে প্রায় সব গণপরিবহনে উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগ গণপরিবহনে নেই কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অর্ধেক যাত্রী নেয়ার কথা থাকলে সম্পূর্ণ সিট ভর্তি করে উল্টো দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে অনেক গাড়িতে। আবার কোনো কোনো মোড়ে জটলা পাকানো অপেক্ষমাণ যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইপিজেড মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি চাকরিজীবী নাঈম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাসে যাত্রীর সংখ্যা বলেন, স্বাস্থবিধি বলেন, সবকিছু আগের মতোই আছে। শুধু সরকারের নির্দেশনা পেয়েই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া আর কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি।’
৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি দিয়ে ভিড় ঠেলে কেন গণপরিবহনে যাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করার কিছুই নেই। সব পরিবহনেই ভিড় আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাওয়ার চিন্তা করলে আজকে আর বাসায় যাওয়া হবে না।’
টাইগারপাস মোড়ে ভিড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক যাত্রী। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভিড় থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ালে তো আজকে বাসে ওঠা হবে না। ভিড় ঠেলেই গাড়িতে উঠতে হবে। এছাড়া করার কিছু নেই।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বাসচালকের সহকারীকে (হেল্পার) জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘লোকজন আমাদের কথা শুনছে না। তারা দ্রুত বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভিড় করে উঠছেন। এতে আমার করার কী আছে!’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) মহিউদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণার দুই দিন পর সরকার আজ সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন খুলে দিয়েছে। প্রথম দিনেই চট্টগ্রামের রাস্তায় গণপরিবহনের চাপ আছে। স্বাস্থবিধির বিষয়টি সবাইকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানার চেষ্টা করা দরকার। এরপরও গাড়িতে অর্ধেকের বেশি যাত্রী উঠতে যাতে না পারে বিষয়টি আমরা দেখছি।’
চট্টগ্রাম বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরের জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতসহ অন্যান্য নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিআরটিএর তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ মাঠে থাকি ততক্ষণ নিয়ম-কানুন পালন করে। আবার আমরা চলে আসলে তারা আগের অবস্থায় ফিরে যায়, এমন অভিযোগ পাচ্ছি। আসলে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। এছাড়া আমাদের অভিযানও অব্যাহত আছে।’
মিজানুর রহমান/এমএসএইচ/জিকেএস