বেডের আশায় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দুই নারী। তাদের পায়ের সামনে দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। কুমিল্লা থেকে করোনা আক্রান্ত এক মুমূর্ষু রোগী নিয়ে এসেছেন। তারা বারবার হাসপাতালের ভেতরে তাকাচ্ছেন। রোগীকে ভর্তি করানোর চেষ্টায় সঙ্গে আসা পুরুষরা গেছেন ভেতরে কথা বলতে।
আলাপকালে তারা জানান, রোগীর অবস্থা খারাপ। কিন্তু তারা শুনে এসেছেন সরকারি হাসপাতালে বেড নেই। বিশেষ করে আইসিইউ খালি নেই। তাই বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে হতে পারে এ শঙ্কায় দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
তাদের পাশেই আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে আছেন ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারা বেগম। মুখে অক্সিজেনের নল লাগানো। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছেন।
তার স্বজনরা জানান, প্রথমে নিউমোনিয়া, পরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে এখানে রেফার করেছেন চিকিৎসকরা। ঘণ্টাখানেক ধরে ভর্তির চেষ্টা করছেন। এখনও ভর্তি হতে পারেননি।
একই সময়ে এক তরুণকে মোটরসাইকেলের পেছনে অক্সিজেন সিলিন্ডার রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসতে দেখা যায়। মোটরসাইকেল থামিয়ে দ্রুত রশি খুলে অক্সিজেন নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে যাচ্ছিলেন।
ওই তরুণ জানান, তার বন্ধুর মা হাসপাতালে ভর্তি। অক্সিজেন সরবরাহে মাঝে মাঝে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাই আগেই কেনা অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করে এনেছেন।
সবগুলো ঘটনা আজ (শনিবার) দুপুরের। ঢামেক হাসপাতাল-২ এর করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগের সামনে এভাবেই হাসপাতালে রোগীরা আসছিলেন। তাদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের ও আশপাশ এলাকার।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীর ঢামেকসহ বিভিন্ন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার চলছে। রোগীর স্বজনরা নিজেদের টাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছেন। আইসিইউ প্রয়োজন হলেও অনেকে সাধারণ বেডও পাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর সরকারি ১৭টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ৩৮৪টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ১৩টি ফাঁকা। এছাড়া হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ৪৩২টি শয্যার মধ্যে মাত্র ৪০টি খালি।
অন্যদিকে বেসরকারি ২৮টি করোনা হাসপাতালে ৮৯১টি আইসিইউ’র মধ্যে ৮৭টি ও ৭০৬টি এইচডিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ৬৮টি ফাঁকা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ‘করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়ে গেছে। একজন রোগী ভর্তি হলে সে বেডটি খালি হতে গড়ে ছয়-সাতদিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগে। এ কারণে সংক্রমণ হ্রাস না পেলে রোগীদের হাসপাতালে ঠাঁই দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
তিনি আরও জানান, এ পরিস্থিতিতে তারা রাজধানীতে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনসহ নানাভাবে রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী এসে যেন অক্সিজেনের অভাবে মারা না যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। অক্সিজেন না পেয়ে রোগী মারা গেলে তা হবে খুবই দুঃখজনক। দেশের মানুষকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
এমইউ/এমএইচআর/এএসএম