বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকার বার্ষিক প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৭ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২২

বাংলাদেশের ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। প্রতিবেদনে কিছু ‘পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরে তারা বলেছে, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাতে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বুধবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকায় আমেরিকান সেন্টার অডিটোরিয়ামে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মার্কিন দূতাবাস।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ নানা ধরনের নিপীড়নে জড়িত থাকলেও এর জন্য তাদের জবাবদিহি করা হয় না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, এই ব্যবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তবে অনিয়ম, ব্যালট-বক্স কারচুপিসহ নানা কারণে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ রয়েছে।

‘পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মতো সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট নিয়ে থাকা নিরাপত্তা বাহিনী অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। নিরাপত্তা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। এই নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নানা ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে থাকেন।’

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কিছু খবরকে ‘গ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব খবর রয়েছে সেগুলো হলো, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড; গুম; সরকার বা তার পক্ষের এজেন্টদের নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ; কারাগারে জীবনের জন্য হুমকিমূলক পরিবেশ; নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক; রাজনৈতিক কারাবন্দিত্ব; বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ; বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় গুরুতর প্রতিবন্ধকতা; ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ; অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া; বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর কড়া বিধিনিষেধ; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ-সমাগমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রভৃতি।

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বস্তুনিষ্ঠ বিবরণের উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের ২০২১ সালের চিত্র উঠে এসেছে এতে।

প্রতিবেদনটিকে ‘বাস্তবভিত্তিক’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পররাষ্ট্র দপ্তর এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য বিশ্বজুড়ে আমেরিকান মিশন, দপ্তরের ভেতরে ও আমেরিকান সরকারের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, শ্রম অধিকার, পুলিশ ও নিরাপত্তা ইস্যু, নারীদের ইস্যুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। কেবল একটি উৎস নয়, নানা ধরনের উৎস থেকে পাওয়া সব তথ্য বস্তুনিষ্ঠভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।

বছর বছর যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, সেসবের আলোকে সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে সিরিজ আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কাজ করে থাকে বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এইচএ/এমআরএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।