মানবতাবিরোধী অপরাধ

পরিচয় পাল্টে যেভাবে পালিয়ে ছিলেন ফাঁসির আসামি আদিল-মুকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৬ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার (৬৯) ও মোখলেছুর রহমান মুকুলকে (৬৭) গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-২)।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণখান ও ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের।

র‍্যাব জানায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০১৫ সালে একটি মামলা হয়। এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি নকিব ও মোখলেছুরসহ ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০১৫ সালে মামলা দায়েরের পরপরই এই ২ জন আত্মগোপনে চলে যান। তারা পরিচয় পাল্টে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল ফোনে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, রায় ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই দুজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলী নদী পারাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং টর্চার সেলে নির‍্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির‍্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে দুজন রায়ের আগেই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৩ জানুয়ারি নকিব ও মোখলেছুরসহ ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারীর ধারাবাহিকতায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার নকিব ও মোখলেছুর মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় বাঙালিদের আটক, নির‍্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই গ্রেফতাররা পলাতক ছিল। তারা গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন এবং একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ প্রদান করতেন। আত্মগোপনে থাকাকালে তারা সাধারণত জনসমাগমের স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।

টিটি/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।