কৃষ্ণপক্ষে কোণঠাসা বেলাশেষে ও বেপরোয়া


প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অনেক কারণেই দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি। তারমেধ্যে অন্যতম হলো নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার গল্প নিয়ে নির্মিত এটাই প্রথম চলচ্চিত্র।

পাশাপাশি এটি হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের পরিচালিত প্রথম ছবি। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর রুপালি পর্দায় নায়করুপে ফিরলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। প্রায় সাতমাস পর নতুন ছবি মুক্তি পেয়েছে ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকা মাহিয়া মাহির কোনো ছবি। স্বভাবতই ছবিটি হলে গিয়ে সাড়া পাবে এই প্রত্যাশা অনুমেয় ছিলো। হলোও তাই।

গতকাল শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া এই ছবিটির হল রিপোর্ট বলছে গেল দেড় বছরে কোনো চলচ্চিত্র নিয়ে এতটা আশা জাগেনি। ১৬টি হলে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি গতকাল সবগুলো হলেই প্রতিটি শো ছিলো হাউজফুল। আর ছবি দেখার শেষে দর্শকদের অনুভূতিও ছিলো উচ্ছ্বাসের।

মুক্তির আগে অনেকেই বলছিলেন নোংরা পলিটিক্সের মুখে ভারতের দুই ছবি ‘বেলাশেষে’ ও ‘বেপরোয়া’র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকবে না ‘কৃষ্ণপক্ষ’। কিন্তু মুক্তির পর দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ই দখল করে নিয়ে দর্শক। আর দর্শকবিহীন হলে কোনঠাসা অবস্থায় ‘বেলাশেষে’ ও ‘বেপরোয়া’।

এই দুটির মধ্যে বেপরোয়া ছবিটির অবস্থা খুবই নাজুক। রাজধানীর ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে গিয়ে দেখা গেল তেমনই দৃশ্য। নেই দর্শক উপস্থিতি। হলের সামনের স্থানটি খোলা মাঠের মতো খা খা করছে। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ছবিটিতে কোনো তারকা নেই। একমাত্র রজতাভ দত্তই পরিচিত মুখ। কে আসবে এমন ছবি দেখতে যেখানে আজই রিয়াজ-মাহির ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তি পেয়েছে।’

তিনি অনুযোগের সুরে আরো বলেন, ‘আমরাও ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণে হয়নি।’

এদিকে বেলাশেষে ছবির খবর সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া না গেলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দর্শক সাড়া পায়নি ভারতের সুপারহিট ছবিটি। তার প্রথম কারণ, ছবিটি প্রায় সব দর্শকই অনেক আগে ইউটিউব-মোবাইলে দেখে ফেলেছেন। দ্বিতীয় কারণ, কৃষ্ণপক্ষ। এমন দারুণ গল্প ও তারকাবহুল ছবি বাদ দিয়ে কেউ দেখা ছবি হলে দেখতে আসছেন না।

পাশাপাশি গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলে গিয়ে দেখা গেল অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। লোকে লোকারন্য হলের চারপাশ। অনেকেই দুপুর বেলায় টিকিট না পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আঁছেন ‘ইভিনিং শো’ দেখবেন বলে। আর সদ্য শো ভাঙার পর বেরিয়ে আসা একদল তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল উচ্ছ্বসিত। কেমন লাগল ছবিটি- জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এককথায় অসাধারণ। ভাবছি আবারও দেখতে আসব কাল। অনেক বন্ধুরাই আজ আসতে পারেনি। তাদের সঙ্গে আবার আসব।’

স্ত্রী-কন্যাসহ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দেখতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুম রাব্বি বলেলেন, ‘অসাধারণ লেগেছে। হুমায়ূন আহমেদের ফ্লেভার নিয়েই নির্মিত হয়েছে ছবিটি। দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন শাওন। বুঝাই যায়নি এটা কোনো নির্মাতার প্রথম ছবি। আর বিশেষভাবে বলতে ছবিতে শিল্পীদের অভিনয়ের কথা। রিয়াজ আর মাহি ছিলেন অনবদ্য। ভাবছি দুই এক দিনের মধ্যে অফিসের কলিগদের পটিয়ে তাদের নিয়ে আবার ছবিটি দেখতে আসব।’

তবে এখানেই শেষ নয়। এফডিসিসহ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতিতেও বিপরীত স্রোতের কিছু আলোচনা জন্ম দিয়েছে ‘কৃষ্ণপক্ষ’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশজুড়ে প্রায় শতাধিক সিনেমা হল মালিকরা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবেশনার জটিলতায় সেটি পারেননি। এ নিয়ে অনেক হল মালিকরা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, ছবিটির পরিবেশনায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার আন্তরিকতা ছিলো না।

সেইসঙ্গে ছবিটি মাত্র ১৬টি হল পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন এর কলাকুশলীরাও। এমনকি ফেসবুকে বিস্ময় প্রকাশ করছেন সাধারণ দর্শকরাও। তারা বলছেন এতদিন পর রিয়াজের প্রত্যাবর্তনের ছবি ছিলো ‘কৃষ্ণপক্ষ’, মাহিরও প্রায় সাত মাস পর এলো কোনো নতুন ছবি। শাওনের প্রথম ছবি এবং এটি হুমায়ূন আহমেদের গল্পে তারই আমেজে নির্মিত। এই ছবিটির জন্য কয়েক মাস ধরেই সবাই অপেক্ষা করছেন। অথচ দেশের আশি ভাগ দর্শকরাই ছবিটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। এটা বেদনাদায়ক!

অনেকে সরাসরি প্রশ্নের কাঠগড়ায় তুলেছেন ‘কৃষ্ণপক্ষ’র পরিবেশনার দায়িত্বে থাকা জাজ মাল্টিমিডিয়াকে। তারা বলছেন, জাজ ‘কৃষ্ণপক্ষ’র প্রতি মনযোগ না দিয়ে ভারতীয় ছবির পরিবেশনার দিকে বেশি মনযোগ দিয়েছে।

কেউ কেউ এই ঘটনায় টেনে এনেছেন আজিজ-মাহির দ্বন্দ্বকেও। তারা স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, ‘ সম্প্রতি গুজব ছড়িয়েছে, আবারো মাহিকে ঘরে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। কিন্তু মাহি রাজি হচ্ছেন না। তাই কৌশলে তাকে জাজে টানার কথা ভাবছে জাজ। আর তারই কৌশল হিসেবে জাজের মালিক আব্দুল আজিজ প্রমাণ করতে চাইছেন, তার হাউজ ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে সফল নন মাহি। সেজন্য ‘কৃষ্ণপক্ষ’কে তিনি ইচ্ছে করেই হলবঞ্চিত করেছেন ভারতীয় ছবির হল বাড়িয়ে।’

যদিও এ বিষয়ে মাহি বা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বরং, মাহি নিজের সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘কেউ যদি কৃষ্ণপক্ষ দেখতে হলে নাও আসেন তবেও তিনি হুমায়ূন আহমেদের গল্পে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত।’ তবে গর্বের পাশাপাশি আশায় বুকও বাঁধতে পারেন মাহি; তার ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দেখতে সিনেমা হলে দল বেঁধেই ছুটে আসছে দর্শক। দর্শকপ্রিয়তার স্রোতে খুব শিগগিরই হয়তো বাড়বে ছবিটির হলের সংখ্যাও।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।