গণভবন যেন ‘গেরস্ত বাড়ি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও তার সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামের গেরস্ত বাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন বিরল দৃষ্টান্ত।

গণভবনের বিশাল আঙিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাকসবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি।

গণভবন সূত্র জানায়, রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন>>এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে: প্রধানমন্ত্রী

দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মন পেঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁজজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে ৫ কেজি হিসাবে পেঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।

গণভবন যেন ‘গেরস্ত বাড়ি’

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি সরকারি, বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আরও পড়ুন>>‘ঘরের কোণায় হলেও একটা কিছু ফসল ফলান’

তিনি বলেন, এ দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠানে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।

গণভবন যেন ‘গেরস্ত বাড়ি’

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, গণভবন আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, ব্রোকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছেন।

আরও পড়ুন>>গ্রামে গিয়ে অনাবাদি জমি চাষ করুন, যুবকদের প্রধানমন্ত্রী

এছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এসব ফসল ফলাতে গণভবনের গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহার করা হয়।

গণভবন যেন ‘গেরস্ত বাড়ি’

এছাড়াও গণভবনের আঙিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগি, তিথির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতলা, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি।

আরও পড়ুন>>সামনেও যত উজান হোক, নৌকা এগিয়ে যাবে: শেখ হাসিনা

উৎপাদিত এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবনের কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন।

এসইউজে/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।