নরসিংদীতে কলেজছাত্রী হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি
নরসিংদীর বেলাবতে কলেজছাত্রী সৈয়দা রিজভী আক্তার দিপা (২১) হত্যা মামলায় একজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফাতেমা নজিব এ রায় প্রদান করেন।
নিহত কলেজছাত্রী সৈয়দা রিজভী আক্তার দিপা বিবিএর ১ম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি বেলাবো সৈয়দপাড়া গ্রামের সৈয়দ সামসুজ্জামানের মেয়ে। এদিকে, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- বেলাবো উপজেলার কাজিরটেক গ্রামের মিয়া উদ্দিনের ছেলে আল-আমিন (২৬)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৭ মে বিকেলে কলেজছাত্রী দিপা বাড়ির আঙিনায় হাঁটাহাঁটি করছিল। এ সময় আখ ব্যবসায়ী আল-আমিন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকায় নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি আল-আমিন কলেজছাত্রী দিপাকে ভালোবাসতো। তাকে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখলে আলামিন সহ্য করতে পারতো না। ঘটনার দিন দিপা তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং রাগের বশবর্তী হয়ে দিপাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। বিজ্ঞ আদালত ৯ মাস তদন্তের পর ১৩ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় প্রদান করেন আদালত।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন (পিপি) অ্যাড. ন.ম রুহুল আমীন এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাড. শেখ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
নিহত ছাত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বখাটের অত্যাচার থেকে বাঁচতে টাঙ্গাইলে বোনের বাসায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মেধাবী ছাত্রী সৈয়দা রিজভী আক্তার দিপা (২১)। নিজ বাড়িতে এসেছিলেন দুইদিনের জন্য। ভয়ে দূরে কোথাও যেতেন না। বের হলেও বাড়ির কাছেই থাকতেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ৭ মে বিকেল ৪টার দিকে নরসিংদীর বেলাবো থানার বাজনাবো গ্রামে নিজ বাসার সামনে একা পেয়ে দিপাকে এলাপাতাড়ি ছুরি মেরে পালিয়ে যায় বখাটে আল আমিন।
আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে প্রথমে বেলাবো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে দিপাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় আল-আমিনকে আসামি করে বেলাবো থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতি বখাটে আল আমিনকে বাজনাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ওই কলেজছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করার কথা স্বীকার করে।
নিহত দিপার বড় ভাই শিক্ষক সৈয়দ আতিকুজ্জামান অঙ্কুর সাংবাদিকদের বলেন, `দিপা আমার ছোট ছিল। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের গ্রামের বখাটে আল আমিন ওকে উত্ত্যক্ত করত। এ কারণে দিপাকে টাঙ্গাইলে বড় বোনের বাসায় পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিংয়ে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কয়েক দিন আগে বাবা দিপাকে বাড়িতে এনেছিল। এরপরও ওই বখাটে দিপাকে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে আল আমিনকে একাধিকবার ধমক এবং তার বাসায় বিচার ও অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
তবে মেয়েকে হারালেও মেয়েরে খুনির ফাঁসির আদেশ দেয়ায় খুশি নিহতের পরিবার। অশ্রু সজল নয়নে নিহত কলেজছাত্রীর বাবা সৈয়দ সামসুজ্জামান বলেন, মেয়েকে তো আর ফিরে পাবো না। মেয়ের খুনির বিচার হয়েছে এটাই এখন সান্ত্বনা। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের একটাই দাবি ফাঁসির আদেশ যেন দ্রুত কার্যকর হয়।
সঞ্জিত সাহা/এসএস/এমএস