প্রতারণার নতুন কৌশল
‘শয়তানের শ্বাস’ দিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রিয়াজুল হাসান রতনের দুটি কিডনিই নষ্ট। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) থেকে মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি তিনি। স্ত্রী মরিয়ম রহমান স্বামীর ওষুধ কিনে হাসপাতালে প্রবেশের আগে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন।
চক্রটি মরিয়মের সঙ্গে কথা বলার পর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। এরপর যখন তিনি স্বাভাবিক হন তখন দেখতে পান তার গলার সোনার চেইন, কানের দুল ও কাছে থাকা ব্যাগ (দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিল) নিয়ে সটকে পড়েছে চক্রটি। অসহায় ওই নারী দ্রুত ছুটে যান মিরপুর মডেল থানায়। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে একটি অভিযোগও করেছেন। ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
গত বছরের ২৭ জুন ‘শয়তানের শ্বাসে’ মানুষকে সম্মোহিত করে সব নিয়ে নেয় প্রতারক শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জাগো নিউজে। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে ‘স্কোপোলামিন’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামক ভয়ানক ড্রাগের নাম।
আরও পড়ুন>> ‘শয়তানের শ্বাসে’ মানুষকে সম্মোহিত করে সব নিয়ে নেয় প্রতারক
সম্প্রতি ওই মাদক দিয়ে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে দেশে। এ মাদক দিয়ে একজন মানুষের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায়। এরপর তার কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে নিতে পারে প্রতারকরা। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
স্কোপোলামিন ড্রাগ মূলত তরল (লিকুইড) ও শুকনো দুই ধরনের হয়। এটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। এটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূর থেকেই শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ২০ থেকে ৬০ মিনিট। আবার এ মাদক খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে এর প্রতিক্রিয়া থাকে দুই থেকে তিনদিন। এটি গ্রহণে ভুক্তভোগী সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সুযোগ লুফে নিয়ে সব লুটে নেয় প্রতারকরা।
রোববার (১৯ মার্চ) অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অসহায় নারী মরিয়ম রহমান এ প্রতারক চক্রের কবলে পড়েন। তার বাসা মিরপুর মডেল থানাধীন ১৩২/১ সি রোডে। রাজধানীজুড়েই এমন প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তবে মিরপুর এলাকায় এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটছে বলে জানা গেছে।
মিরপুর মডেল থানায় ভুক্তভোগী মরিয়মের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে মিরপুর মডেল থানাধীন শিশু হাসপাতালের সামনে থেকে স্বামীর জন্য ওষুধ কেনেন। এরপর হেঁটে তিনি মিরপুর দুই নম্বরের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় অজ্ঞাতনামা তিন ব্যক্তি (বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর) মরিয়মের কাছে আসেন। গল্পের ছলে তারা বিভিন্ন রকম কথা বলে কৌশলে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পেছনের গলিতে নিয়ে তাকে চেতনানাশক দ্রব্যের মাধ্যমে প্রায় অচেতন করেন। পরে গলায় ও কানে থাকা দেড় ভরি ওজনের সোনার চেইন ও দুটি কানের দুল, ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি স্বাভাবিক হয়ে দেখতে পান সবকিছু নিয়ে গেছে চক্রটি।
আরও পড়ুন>> রমজানে জাল নোট প্রতিরোধে ঢাকার ৫৮ স্থানে ভিডিও প্রচারের নির্দেশ
ভুক্তভোগী মরিয়ম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামী কিডনি রোগে ভুগছেন। তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা কিডনি পরিবর্তন করতে বলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আমার কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে প্রতারকরা। আমি কতটা খারাপ অবস্থায় আছি তা কাউকে বোঝাতে পারবো না।
তিনি আরও বলেন, প্রতারকদের সঙ্গে কথা বলার পর কী হলো কিছুই বুঝতে পারিনি। কিছুসময় পরে দেখি আমার কাছে কিছুই নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার পর মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ‘শয়তানের শ্বাস’ নামক মাদকের বিষয়েও তদন্ত চলছে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
টিটি/ইএ/জেআইএম