শ্যামপুরে উদ্বোধন হলো অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বাস্তবায়িত ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম উদ্বোধন করা হয়েছে।
রোববার (৪ জুন) শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ গুদাম উদ্বোধন করেন।
এসময় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, প্রকল্পের ঠিকাদার নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মো. আব্দুল্লাহ আল মাকসুস এবং বিসিআইসি চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রকল্পটি মার্চ ২০১৯ সালে শুরু হয়ে সম্প্রতি এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ধরা হলেও প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এরমধ্যে জিওবি তথা সরকারি অনুদান ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিসিআইসি দিয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ফলে এ প্রকল্পে সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
আরও পড়ুন: অস্থায়ী রাসায়নিক গুদামের উদ্বোধন ৪ জুন
৬ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর নির্মিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি গুদাম ও তিনতলা বিশিষ্ট দুটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম একটি নিরাপদ জায়গায় দ্রুততম সময়ে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ‘উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড’ শ্যামপুর, ঢাকা এর স্থলে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি জরুরিভিত্তিতে সরকার হাতে নেয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, নিমতলী ও চুরিহাট্টা ট্র্যাজেডির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তায় এ রাসায়নিক গুদাম নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। অস্থায়ীভাবে নির্মিত এ রাসায়নিক গুদামে শিগগির প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। টঙ্গীতে এরকম একটি গুদাম নির্মিত হচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে এরই মধ্যে দেশে ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সরকার অস্থায়ীভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বিশেষ করে পুরান ঢাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমির ওপর ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেখানে আমরা ভূমি উন্নয়ন করেছি। বাউন্ডারি নির্মাণ ও অন্যান্য ভৌত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছি। প্লট বরাদ্দও প্রক্রিয়াধীন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও বিস্ফোরক দ্রব্যের জন্য আলাদা গুদামের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরান ঢাকা থেকে এগুলো স্থানান্তর করা হবে। আমি আশা করবো, দ্রুত যেন এ নীতিমালাটি (পুরান ঢাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তর নীতিমালা) প্রণয়ন করা হয়। এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বারসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি যারা এখানে আছেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা করে দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। এ নীতিমালা করতে যেন আবার কয়েক বছর লেগে না যায় সেজন্য আমি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ করব।
মেয়র আরও বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট সময় যেমন ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং নীতিমালাটি যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। যারা এখানে গুদামে আসবেন তাদের কিন্তু আবারও বিনিয়োগ করতে হবে। তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় তারা যেন উৎসাহিত বোধ করেন। কিছু ছাড় দিয়ে হলেও সেভাবে যেন নীতিমালাটি করা হয়। এমনভাবে যেন কোনো নীতিমালা করা না হয় যেটা বাস্তবতার নিরিখে ব্যবসায়ীদের আরও নিরুৎসাহিত করবে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে আমি অনুরোধ করব। এ বিষয়ে আমাদের তরফ হতে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সব বিপজ্জনক রাসায়নিক সামগ্রী ধীরে ধীরে স্থানান্তর হবে। একটি দুর্যোগপূর্ণ নগরী হিসেবে নয়, আমরা চাই ঢাকা হোক দুর্যোগ সহনশীল বাসযোগ্য একটি নগরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে আবারও পেছনের দিকে নিয়ে যেতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে স্বাধীনতাবিরোধীদের নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
এনএইচ/এমকেআর/জেআইএম