দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে বসে থাকতে হয়: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ফাইল ছবি

ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট। এই যানজটের কারণে প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিটই বসে থাকতে হয় রাস্তায়। ফলে জ্বালানি পুড়ছে, সময় অপচয় হচ্ছে। একই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। আর বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার চিকিৎসায় একজন মানুষকে বছরে চার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘সবুজ নগরীর জন্য দূষণ হ্রাস’ শীর্ষক সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব কথা জানানো হয়। এ সংক্রান্ত প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

আরও পড়ুন: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পরও বনানী-মহাখালীতে তীব্র যানজট

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় গবেষণাপত্র উপস্থাপনা করেন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত।

jagonews24

উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, সড়ক তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীকে ধোঁকা দিয়ে ফাইল পাস করে গাছকাটা হয়। প্রধানমন্ত্রী এখন বুঝে গেছেন। কোনো ফাইল এলেই সেই প্রকল্পে গাছকাটা হচ্ছে কি না, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে পাস করেন। পরিবেশে সম্মত নয়, এমন অনেক ফাইল ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: দুপুর থেকে ঢাকায় যানজট, বিজয় সরণিতেই ঘণ্টা পার

উপমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের আইন অনেক আছে, কিন্তু বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ নেই। এটা শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শ্রদ্ধাশীল না হলে অনেক মত ও পথ থাকলেও লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। পরিবেশের উন্নয়নে আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে গোলটেবিলে পরিবেশ রক্ষার কথা বলে বাসায় গিয়ে পরিবেশ দূষণে পলিথিন ব্যবহার করবে। সচেতন না হলে আইন দিয়ে পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করা যাবে না, ব্যবহার বন্ধ হবে না। এর থেকে সৃষ্ট পরিবেশেরও ক্ষতি রোধ করা যাবে না।

jagonews24

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহামিদা খাতুন বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু তা হচ্ছে পরিবেশকে ধ্বংস করে। পরিবেশ না বাঁচিয়ে উন্নয়ন করলে সে উন্নয়ন টেকসই হবে না।

আরও পড়ুন: বাসচালকের সহকারীকে পুলিশের মারধর, মহাসড়কে যানজট

বক্তারা জানান, পরিবেশ দূষণের প্রধান দুটি উৎস হলো বায়ু ও পলিথিন। এছাড়া নির্মাণ, যানবাহন, শিল্প, ইটভাটা থেকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ঘরের বাইরে বা ভেতরে দুই পর্যায়ে হচ্ছে ক্ষতি। ঘরের ভেতরে ইলেকট্রনিক পণ্য, ফ্রিজ, ফ্যান, এমন কি বাজারে ব্যবহৃত পলিথিন ঘরে এসে পরিবেশের ক্ষতি করছে। এ ক্ষতি মারাত্মকভাবে শিশুদেরও ওপর পড়ছে। এ ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে আইনি পদক্ষেপ যেমন দরকার, আবার সচেতনতাও দরকার।

পরিবেশ রক্ষায় সিপিডির সুপারিশমালা

১. ইটভাটা ও কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়। পাঁচ বছরের মধ্যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটা তুলে দেওয়া।

২. সরকার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে, সেগুলো যেন নতুন করে চালু না হয়।

৩. কয়লা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা দেওয়া।

৪. যারা প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা।

৫. প্লাস্টিক পণ্য বাদ দিয়ে বিকল্প পরিবেশ সম্মত কাগজ বা কাপড়ের পণ্য উৎপাদন করতে চাইলে তাদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়া। প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া।

৬. যে পরিবেশ দূষণ করবে তাকে আর্থিক দণ্ড দিতে হবে। আরও যে সব শাস্তির অধীনে আনা যায়, সেগুলো নিশ্চিত করা।

৭. পরিবেশ সহায়ক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি বাড়ানো। এ সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালাগুলো আপডেট করা।

৮. এ সম্পর্কিতে আইন প্রয়োগ করতে যে সব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোকে শক্তিশালী করা, জবাবদিহিতা সৃষ্টি করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

৯. আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা। যাতে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ চলে না যায়।

১০. জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

এনএইচ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।