মানবসেবার ৭৬ বছর

বাংলাদেশে আঞ্জুমান মুফিদুলের সেবার পরিধি বাড়ছেই

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৩
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের চিত্র

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম-ঢাকা বাংলাদেশের একটি ইসলামী জনকল্যাণ সংস্থা। বাংলাদেশে এটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম নামেই পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি মুসলমানদের বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে মানবসেবাধর্মী কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করেছে বহুক্ষেত্রে। মরদেহ দাফন, এতিমদের লালন-পালন, শিক্ষা, চিকিৎসায় অবদান রাখছে সংস্থাটি। দুর্যোগে-সংকটে পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষের। আর আঞ্জুমানের এ চলার শক্তিও মানুষ। মানুষের দান আর সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

১৯০৫ সালে ভারতের কলকাতায় নেতৃস্থানীয় মুসলিম সমাজ দরদিদের সহায়তায় একজন সুরাটবাসী মুসলিম সমাজকর্মী ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লের উদ্যোগে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৪৭ থেকে ঢাকায় আঞ্জুমানের কার্যক্রম শুরু। বর্তমানে এ সংস্থাটির হেড অফিস কাকরাইলে আঞ্জুমান মুফিজুল ইসলাম রোডে অবস্থিত। সেই হিসেবে সংস্থাটি ৭৬ বছর ধরে বাংলাদেশে তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা আসছে।

আরও পড়ুন>> দেশে নিউমোনিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ২৪ হাজার শিশুর মারা যায়

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ বছরে (২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) সংস্থাটি ১৩ হাজার ৯৯৬টি বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন করেছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৩৭৮টি বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন করেছে। সর্বশেষ ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ৫১৭টি বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন করা করেছে।

আরও জানা যায়, শুরু থেকেই বিনামূল্যে বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের সেবা দিয়ে আসছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিনামূল্যে মরদেহ ও রোগী পরিবহনসেবা। সর্বশেষ ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে ৬ হাজার ৮৫টি মরদেহ পরিবহন করেছে আঞ্জুমান।

এছাড়া স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছে। এতিম শিশুদের জন্য ঢাকা মহানগরে তিনটি, নারায়ণগঞ্জে একটি ও সাভারে একটিসহ আঞ্জুমানের মোট পাঁচটি এতিমখানায় ৪০০ শিশু থাকা-খাওয়াসহ বিনামূল্যে পড়াশোনা করছে।

আরও পড়ুন>> অর্থাভাবে আটকে আছে ক্যানসার আক্রান্ত শাওনের চিকিৎসা

সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দুটি জুনিয়র হাইস্কুল, দুটি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরিচালনা করছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার ৭০০ জন গরিব ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।

সূত্র আরও জানায়, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সম্প্রতি ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবায় ক্যাম্প পরিচালনার মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ সামগ্রী দিচ্ছেন। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত আঞ্জুমানের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ক্যাম্প থেকে এক হাজার ২৬ জন নারী ও শিশু চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। এছাড়া প্রতি শনিবার ওয়াশপুর বসিলা, মোহাম্মাদপুর নন্দীপাড়া, খিলগাঁও, চকবাজার, চুড়িহাট্টা এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন>> ‘অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতন হওয়া জরুরি’

সম্প্রতি নতুন সেবা যোগ হয়েছে আঞ্জুমান মুফিদুলে। বাসায় গিয়ে মরদেহ গোসলের সেবা দিচ্ছে বেসরকারি সংস্থাটি। তারা জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিতে সক্ষম এমন ব্যক্তি/সেবাদানকারী সংস্থার সংখ্যা খুব সীমিত। এ প্রেক্ষাপটে তারা এখন ‘বাসায় গিয়ে মাইয়াতের গোসল দান সেবা’ কার্যক্রম চালু করেছে।

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি এবং সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান আজিম বখশ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, অনেকের মরদেহ দিনের পর দিন মর্গে পড়ে থাকে। আবার এমন মানুষও আছে, যাদের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরও স্বজনরা নেন না। এসব মরদেহ দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন>> চিকিৎসকের অবহেলায় মা-নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

আজিম বখশ বলেন, আঞ্জুমানের কাছে দুভাবে মরদেহ আসে। বিভিন্ন হাসপাতালে মর্গে থাকা মরদেহগুলো সরকারের আদেশে হস্তান্তর করা হয়। আর বেওয়ারিশ মরদেহগুলো পুলিশের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে।

তিনি বলেন, ১১৭ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান অথচ আমাদের স্থায়ী একটি কবরস্থান নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হলো স্থায়ী কবরস্থান। বর্তমানে রায়েরবাজার ও জুরাইন কবরস্থানে মরদেহ দাফন করি। ফলে জায়গা সংকটের কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সিটি করপোরেশন একবার একেক জায়গা দেখায়, কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় রায়েরবাজারে ২ একর জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর দেশে নতুন সরকার গঠন করায় এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

আরও পড়ুন>> গর্ববতী নারীদের প্রতি ৬ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

জানা যায়, কলকাতায় তৎকালীন মুসলিম সমাজে ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে লক্ষ্য করেন যে বেওয়ারিশ মুসলমানদের মরদেহ ইসলামী রীতিতে দাফর না করে কাফন-জানাজা ব্যতিরেকে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। তখন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ইসলামিক রীতি অনুসরণ করে বেওয়ারিশ মুসলমানদের মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা শুরু করে। কালক্রমে এ সংস্থা নানারূপ মানবতাবাদী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে। কেবল মুসলমান নয়, বর্তমানে সব ধর্মের মানুষ এ সংস্থার সেবা পেয়ে থাকে।

আঞ্জুমানের প্রতিষ্ঠানগুলো
১. মোখলেসুর রহমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, শ্যামলী, ঢাকা।

২. রিদোয়ান রহমান টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, গোপীবাগ, ঢাকা।

৩. রায়হানা মাহবুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নয়াটোলা, ঢাকা।

৪. জানিলুর রহমান ইসলামিয়া জুনিয়র হাইস্কুল, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

এছাড়া আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম পরিচালিত হোমগুলো (এতিমখানা) হলো:

১. শেঠ ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লে বালক হোম, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

১. এ বি এম জি কিবরিয়া বালিকা হোম, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

৩. আজিমুল ইসলাম বালিকা হোম, সাভার, ঢাকা।

৪. জামিল হাসমত আরা বালিকা হোম, তল্লা, নারায়ণগঞ্জ।

৫. মোসাম্মৎ আয়েশা খানম মাদরাসাতুল বানাত, নয়াপল্টন, ঢাকা।

৬. আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম আনোয়ারা জাকারিয়া এতিমখানা, হালিশহর, চট্টগ্রাম।

৭. আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম এতিমখানা, ইপিজেড রোড, কুমিল্লা।

৮. মোবারক হোসেন রত্ন এতিমখানা, ডি সি রোড, পাবনা।

৯. আঞ্জুমান মুসামিয়া শিশু সদন, সাতপাই, নেত্রকোনা।

যে কোনো সেবায় আঞ্জুমানকে কল করতে হটলাইন:
প্রধান কার্যালয়: ফোন: ০২-৪৮৩১৭১৬৭/০২-৪৮৩১৭২৬১
কাকরাইল সেবাকেন্দ্র: ফোন: ০২-৫৮৩১২১৫৬/০১৩১৮-২৪২৯৯৭
গেন্ডারিয়া সেবাকেন্দ্র: ফোন: ০২-৪৭৪৪১৬৬০/০২-৪৭৪৪০৭৮৯
মুগদাপাড়া সেবাকেন্দ্র: ফোন: ০২-৭২৭২৭০৫/০২-৭২৭৪৪৩৫।

আরএএস/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।