১১২ চোরাই ফোন উদ্ধার
চুরির পর মোবাইলের গোপন ছবি-ভিডিও দিয়ে টাকা দাবি
গত তিন মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে হারানো ১১২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব ফোন চুরির পর একাধিক হাত বদল হয়। কখনো কখনো বেশকিছু ফোনের গোপন ছবি ও ভিডিওকে পুঁজি করে প্রকৃত মালিকের কাছে টাকাও দাবি করা হয়। টাকা না দিলে গোপন ফোনে থাকা ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন চক্রের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) শাখার মনিটরিং সেল বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ উদঘাটন করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও আইনের আওতার আনতে সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা সাইবার পেট্রোলিং ও মনিটরিং করে থাকে। এই সেল সিপিসির ফেসবুক পেজ, হটলাইন নম্বর ও ই-মেইলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সাইবার সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ গ্রহণ করে থাকে।

সাইবার সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধারে একটি সেল গঠন করে সাইবার পুলিশ সেন্টার। কারও মোবাইল ফোন হারানো গেলে সংশ্লিষ্ট থানার জিডির কপি ও অন্য প্রমাণাদিসহ সাইবার পুলিশ সেন্টারের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সিআইডিপ্রধান বলেন, এ অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে হারানো মোবাইল ফোনের অবস্থান এবং ব্যবহারকারী শনাক্ত করে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। গত তিন মাসে এমন ভুক্তভোগী সিপিসির ফেসবুক পেজে অভিযোগ দাখিলের পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ১১২টি হারানো মোবাইল ফোন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করে সিআইডির সাইবার টিম। এভাবে গত দেড় বছরে ৫০০টির বেশি হারানো ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, মোবাইল ফোনে অনেকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত এবং ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও থাকে। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন আইডিও লগইন থাকে। এসব ফোন হারিয়ে ভুক্তভোগীরা তখন অনেকটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হারানো ফোন থেকে ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও সংগ্রহ করে পরে ভুক্তভোগীদের হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল করা হয়। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটি চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতারও করি।

তিনি বলেন, ১১২টি মোবাইল উদ্ধারের ক্ষেত্রে অধিকাংশই ছিল হারানো জিডির পরিপ্রেক্ষিতে। তবে উল্টাপাল্টা কনটেন্ট থাকলে সেসব দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পাওয়া যায়। সেটা নিয়ে সিআইডি তদন্ত করে একটি চক্রকে শনাক্ত করে আটজনকে গ্রেফতার করেছে। কুমিল্লায় একটা অভিযান হয়েছে। সেখানে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার কাজই হচ্ছে উল্টাপাল্টা কনটেন্ট ধরে প্রতারণা করা।
হারানো মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন হলে বা দেশের সীমান্ত পার করে অন্য দেশে চলে গেলে সেসব ফোন উদ্ধার করা অনেক কঠিন উল্লেখ করে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, একজন অ্যাম্বাসেডর ফোন করে আমাকে জানান, তার ভাইয়ের ফোন মগবাজার থেকে হারিয়ে গেছে। আমরা সেটার আইএমইআই নম্বর ধরে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। কিন্তু ফোনটির আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হলে তা উদ্ধার কঠিন।
ফোন ব্যবহারে সর্বসাধারণের প্রতি সিআইডির ৪ পরামর্শ-
১. যাচাই-বাছাই ছাড়া পুরোনো মোবাইল ফোন কেনাবেচা করা থেকে বিরত থাকুন।
২. মোবাইল ফোনে নিজের বা পরিবারের কারও একান্ত ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. মোবাইল ফোনে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি ও পাসওয়ার্ড সার্বক্ষণিক সেভ করে রাখা থেকে বিরত থাকুন।
৪. আর্থিক সেবাপ্রদানকারী মোবাইল অ্যাপসের অটো লগইনের ব্যবস্থা না রাখা।
টিটি/এমকেআর/জেআইএম