স্কুল ফিডিং প্রকল্প অনুমোদনের আগে চুলচেরা বিশ্লেষণে কমিশন

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
ফাইল ছবি

দেশের দরিদ্র্যপ্রবণ এলাকাগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিকের ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচদিন পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের দুধ, ডিম, মৌসুমি ফল, কলা, ফর্টিফাইড বিস্কুট, কেক ও বনরুটি দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১৫০ উপজেলার ১৮ থেকে ১৯ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

সরকারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (ফেইজ-১) প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচদিন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হবে। সব স্কুলে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত টিফিন টাইম চলাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব খাবার বিতরণ করা হবে। তবে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প আগে অনুমোদন না হওয়ায় নতুনভাবে নেওয়া এ প্রকল্প নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে কমিশন। সবকিছু ঠিক থাকলেই প্রকল্পটি একনেক সভায় তোলা হবে।

 

‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের দুধ, ডিম, মৌসুমি ফল, কলা, ফর্টিফাইড বিস্কুট, কেক ও বনরুটি দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১৫০ উপজেলার ১৮ থেকে ১৯ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

 

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, এর আগে নানান সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয় একই ধরনের প্রকল্প। ওই প্রস্তাবিত প্রকল্পে খিচুড়ি রান্নার বিষয় ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সব শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখা, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের লক্ষ্য ছিল।

এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্য থাকলেও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি প্রকল্পটি। প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত ডাল এবং স্থানীয় সবজি দিয়ে বাচ্চাদের খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছিল প্রকল্পে।

আরও পড়ুন

তবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটি বাতিল করা হয়। প্রকল্প থেকে খিচুড়ি রান্নার বিষয়টি বাতিল করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন খিচুড়ি রান্না করলে বাচ্চাদের পড়ালেখার ক্ষতি হবে। প্রকল্পের ফরমেট পরিবর্তন করে একদিন দুধ, একদিন ডিম ও একদিন বিস্কুটসহ খাবারে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় তিন বছর পরে একই ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর তিন বছরের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৭৫৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন চার হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে আসবে ৬৪ কোটি টাকা।

 

প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের থেকে বেশি পড়ালেখা করেন প্রকল্পের বিষয়ে। সুতরাং এমনভাবে এটা উপস্থাপন করা হবে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে। সেজন্য বার বার পিইসি সভা ও মিটিং করা হচ্ছে।

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েক ধাপে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে কমিশন। সামনে একই ধরনের সভা আরও আয়োজন করবে কমিশন। কীভাবে খাবার বিতরণ হবে, কীভাবে খাদ্যের দাম নির্ধারণ হবে নানান বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে কমিশন। বিষয়গুলো নিয়ে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে কমিশনকে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় খাদ্যসামগ্রী/স্কুল ফিডিং ক্রয়, পরিবহন ও পরিদর্শন খাতে ব্যয় হবে চার হাজার ১৮১ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রকল্পে মোট ২১ হাজার জন টিফিন মিল ম্যানেজার থাকবেন, এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। ভেন্ডর পরিবহন, খাদ্য বিতরণ, গোডাউন, সার্ভিস চার্জ ও প্যাকেজিং খাতে ২৮২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। চার লাখ ২০ হাজার অ্যাপ্রোন ও রুমাল কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। তবে এসব ব্যয় যৌক্তিক কি না যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

স্কুল ফিডিং প্রকল্প অনুমোদনের আগে চুলচেরা বিশ্লেষণে কমিশন

সরকারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (ফেইজ-১) নামের নতুন প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন সভা করবে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার কীভাবে বিতরণ করা হবে এবং এর আগে কেন ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছিল, এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে পরিকল্পনা কমিশন।

আরও পড়ুন

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের থেকে বেশি পড়ালেখা করেন প্রকল্পের বিষয়ে। সুতরাং এমনভাবে এটা উপস্থাপন করা হবে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে। সেজন্য বার বার পিইসি সভা ও মিটিং করা হচ্ছে। কারণ প্রকল্পটি জাতীয় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার বিতরণের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

যেদিন দুধ দেওয়া হবে, দুধের সঙ্গে বনরুটি থাকবে। যেদিন ডিম দেওয়া হবে, ডিমের সঙ্গে কলা এবং ফর্টিফাইড বিস্কুট থাকবে। মৌসুমি ফল দেওয়া হলে সঙ্গে থাকবে অন্য খাবার। যেমন বরিশালে আমড়ার সময় আমড়া, রাজশাহীতে আমের সময় আম, সঙ্গে দুধ পরিবেশন করা হবে।

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচদিন নানান ধরনের খাবার পরিবেশন করা হবে। এর মধ্যে থাকবে দুধ, ডিম, ফর্টিফাইড বিস্কুট, কলা ও মৌসুমি ফল। যেদিন দুধ দেওয়া হবে, দুধের সঙ্গে বনরুটি থাকবে। যেদিন ডিম দেওয়া হবে, ডিমের সঙ্গে কলা এবং ফর্টিফাইড বিস্কুট থাকবে। মৌসুমি ফল দেওয়া হলে সঙ্গে থাকবে অন্য খাবার। যেমন বরিশালে আমড়ার সময় আমড়া, রাজশাহীতে আমের সময় আম, সঙ্গে দুধ পরিবেশন করা হবে। এভাবে ১৫০ উপজেলায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিফিনে খাবার দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. নুরুল আমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা কমিশনে কয়েকধাপে সভা করেছি। সামনে আরও পিইসি সভা হবে। ৩৫ লাখ শিশুকে টিফিনে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে কমিশন। আমরা কয়েকটি বিষয়ে জানিয়েছি। এটা নিয়ে আরও যাচাই-বাছাই হবে। এর পরেই এটা একনেক সভায় উঠবে।’

এমওএস/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।