স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বর ‘গুরুত্বহীন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড সংলগ্ন উদয়ন স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল আনুমানিক সতের আঠার বছর বয়সী জনা পাঁচেক তরুণ-তরুণী। পড়ন্ত বিকেলে লাল আভার সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পূর্বক্ষণে তরুণ-তরুণীদের একজন অদূরে স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বরের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে অন্যরা তার হাত টেনে ধরে ‘ওখানে কীইবা দেখার আছে’ বলে এসএম হলের পথ ধরে পলাশীর দিকে চলে গেল।
চত্বরের পাশ দিয়ে গেলেও ভেতরে প্রবেশ না করার এ রকম দৃশ্য প্রায় নিত্যদিনের। প্রায় দেড় দশক আগে ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ বর্তমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর শামীম শিকদারের তৈরি ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বর’ এর মোড়ক উন্মোচনে তথা উদ্বোধন হলেও উপযুক্ত প্রচার প্রচারণার অভাবে সাধারণ মানুষের কাছে এ চত্বরটি ‘গুরুত্বহীন’ হয়ে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করলেও অধিকাংশ মানুষই এ চত্বরটির ভেতরে কী ভাস্কর্য রয়েছে। এর গুরুত্বই বা কতটুকু তা সঠিকভাবে জানেন না। এ চত্বরে রয়েছে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অঙ্গুলি তুলে মাথা উঁচু করে দণ্ডায়মানসহ বিভিন্ন মহান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য।
ভাস্কর শিল্পী শামীম শিকদার নিপুণ হাতে তৈরি করেছেন শতাধিক অপূর্ব সুন্দর ভাস্কর্য। মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য স্যার পি.জে. হার্টস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আহমদসহ বিখ্যাত মানুষদের ভাস্কর্য রয়েছে এ চত্বরটিতে। নানা গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ এ চত্বরে বিভিন্ন সারিতে ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ চত্বরটিতে ঘণ্টাখানেক সময় দিলেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত মহান ব্যক্তিসহ উপমহাদেশের রাজনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এ চত্বর প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার ও শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
রাজধানীর জিগাতলার বাসিন্দা জামিল হোসেন পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে স্বাধীনতা ভাস্কর্য চত্বরে আসেন। ছয় বছরের শিশু পুত্রকে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখিয়ে বলছিলেন, এই মহান ব্যক্তির জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ছোট্ট শিশু কিছু না বুঝে দুচোখ উপরে তুলে বাবা দেখো জাতীয় পতাকা বলে চিৎকার করে উঠলো।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জামিল হোসেন বলেন, এ চত্বর সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে প্রচার প্রচারণার প্রয়োজন।
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি