ঠক, ঠক, ঠক: দরজা থেকে হৃদয় নাড়ার বিভীষিকাময় ইতিহাস
‘ঠক, ঠক, ঠক। স্যার, একটু বাইরে আসুন। কথা আছে।’ বাক্যটি শুনলেই মানসপটে ভেসে উঠে একটি ইতিহাস। সুচতুরভাবে এবং ভদ্র ভঙ্গিতে বলা বাক্যটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম ঘৃণ্য। প্রাথমিকভাবে দরজায় কড়া নাড়লেও বাক্যটি বাংলাদেশের হৃদয় নেড়ে দিয়েছিল। এর পেছনে ছিল একটি জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গু করে দেওয়ার পরিকল্পনা। এক রাতেই হত্যা করা হয়- ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং অন্যান্য ১৬ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী।
গল্পটি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের। এটি একটি জাতির হাজার বছর পিছিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। ওই রাতে পাক-হানাদার বাহিনী দেশের প্রথম সারির অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়। শকুনের দল এক রাতেই নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালির ওই মেধাবী সন্তানদের।
১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী দিবসের জাতীয় সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন নিউজ উইকের তথ্য অনুযায়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট এক হাজার ৭০ জন।
অন্য একটি তথ্যসূত্রে জানা গেছে, দেশ বিজয়ের পর ২০ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র জানায়, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩৬০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।
আজ সেই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসটি জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস।
১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়, ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর নকশা করেন জামী-আল সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের ধারাবাহিক প্রকাশ করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি প্রতিবছর পালন করা হয়। এবারেও সেটি পালন হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়াও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী দেবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
বেসরকারিভাবে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এসইউজে/এনএইচআর