ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা
রাজধানীর বনানীতে মুন্সি ওভারসিজের অফিসে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে সিদ্দিক হোসেন (৫০) নামে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বনানী চার নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়ির অফিসে এ ঘটনা ঘটে। খোদ রাজধাীতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড জননিরাপত্তার বেহাল চিত্রকেই তুলে ধরে। এ ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। ঘটনার যে বিবরণ গণমাধ্যমে এসেছে তাতে বলা হয়েছে, বনানীতে অফিসে ঢুকে সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে হত্যার মিশনটি ছিল মাত্র আড়াই মিনিটের। এ সময়ের মধ্যে একজনকে হত্যা এবং তিনজনকে গুলি করে পালায় মুখোশধারীরা। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
ব্যবসায়ীরা নিরাপদ বোধ করলেই দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ আসবে। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সমাজের স্বার্থে আইন-শৃংখলার উন্নয়নে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকে আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। দেশের জনগণের সম্পদ এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলেও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।
শুধু ব্যবসা বাণিজ্য কেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে সবক্ষেত্রেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঁদাবাজি এক প্রধান সমস্যা। বনানীর হত্যাকাণ্ডের পেছনেও চাঁদাবাজির ঘটনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনেও অনেকাংশে দায়ী এই চাঁদাবাজি। পণ্যবাহী পরিবহনগুলো পথে পথে চাঁদাবাজির শিকার হয় বলেই খুব স্বাভাবিক কারণেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আন্তরিক হলে চাঁদাবাজি বন্ধ কোনো কঠিন কাজ নয়। সাধারণত দেখা যায় কিছু দুর্বৃত্ত যখন যে সরকার আসে সেই সরকারের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। এতে কিছু লোকের পকেট ভারী হয়। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারের ইমেজ। আর সাধারণ মানুষকে এই চাঁদাবাজির মাশুল গুণতে হয়। কাজেই চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। ছিনতাই লুটতরাজ বন্ধেও পুলিশকে সক্রিয় হতে হবে। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতার বোধ। রাষ্ট্র তথা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। মানুষের মধ্যে যদি নিরাপত্তা বোধ না থাকে তাহলে সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করবে। আর একটি অস্থির সমাজ ব্যবস্থায় কখনই কল্যাণকর কিছু হওয়া সম্ভব নয়।
এছাড়া মাদক সমস্যাও দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। যার প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে কিছুতেই মাদকের ভয়াল থাবার শিকার হতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য জোরদার অভিযান চালাতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে এনিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড যাতে মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত হতে না পারে সেটিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সহায়ক। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করে। এর নেতিবাচক প্রভাবও খুব সুদূর প্রসারী। কাজেই সরকারি দল বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পরমত সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকতে পারে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যেন কিছুতেই দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশের স্বার্থে অভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা কোনো একক ও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এ জন্য সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
এইচআর/এমএস