পোশাককর্মীদের সুরক্ষা দেবেন কে?
করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই গতকাল রোববার (২৬ এপ্রিল) থেকে সীমিত আকারে চালু হয়েছে পোশাক কারখানা। তবে ধাপে ধাপে সব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। দেশব্যাপী লকডাইনের মধ্যে পোশাক কারখানে খোলা নিয়ে নানামুখী সমালোচনা আছে। কেউ বলছেন এতে পোশাককর্মীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিকে পড়বেন। আবার কেউ বলছেন দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে কারখানা খোলা রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ দুটোর সাথে সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব পোশাক কারখানা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে পোশাক মালিকদের বড় দুটি সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। বিশ্বব্যাপী মহামারির মধ্যেও অনেক পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ বহাল রয়েছে। এসব অর্ডার যেন বাতিল না হয় তাই কারখানা খুলে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। বিষয়টি বিবেচনায় সরকারের অনুমতিতে প্রথমে সীমিত আকারে চালু থাকবে পোশাক কারখানা। পরে ধাপে ধাপে সব কারখানা খুলে দেয়া হবে।
গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পোশাকশিল্পের ৮৬৫টি কারখানা খুলে দেয়ার দাবি আছে। এ পর্যন্ত তিন বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্ডার বাতিল হয়েছে। আমাদের ওপর কারখানা খুলে দেয়ার চাপ আছে। অনেকের অর্ডার আছে। এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনক্ষণ বেঁধে, সীমিত আকারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খুলে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে যদি অর্ডার চলে যায় তাহলে তা ফেরত আনা কঠিন হবে। তাই সীমিত শ্রমিক নিয়ে সীমিত আকারে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে পোশাক কারখানা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। এরপর ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় পোশাক কারখানা খোলার বিষয়টি অবহিত করে বিজিএমইএ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠায়। একই সিদ্ধান্ত নেয় পোশাক শিল্প মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ। এরপর শ্রম মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালুর জন্য একটি নির্দেশনা জারি করে।
কারখানা খোলার বিষয়ে ২৫ এপ্রিল রাতে বিজিএমইএ সদস্যদের উদ্দেশে এক নির্দেশনায় বলা হয়, অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সামগ্রিক বিবেচনায় বিজিএমইএ আপনাদের জোনভিত্তিক সীমিত পরিসরে কারখানা খোলার পরামর্শ দেবে সরাসরি। এর আগে শ্রমিকদের ঢাকায় না আনার পরামর্শ দেয়া হলো। সেসব কর্মী নিয়ে কারখানা চালু করুন যারা কারখানার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করেন।
শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে মালিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ বলছে, মানবিক কারণে শ্রমিকদের ছাঁটাই না করার জন্য সদস্যদের অনুরোধ করা যাচ্ছে। অনুপস্থিত শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতন পৌঁছে দেয়া হবে।
বিজিএমইএর নির্দেশনায় আরও বলা হয়, পরামর্শ অনুযায়ী কারখানা খোলার তারিখ ও প্রটোকল দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিপালনের অনুরোধ করছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা নিয়মবহির্ভূতভাবে ঢাকায় চলে আসলে সংগঠন হিসেবে আমাদের পক্ষে কোনো সহযোগিতা করা সম্ভব হবে না।
তিন ধাপে কারখানা খালার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠনগুলো। প্রথম পর্যায়ে রোববার ও সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এলাকার নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পলিংয়ের কারখানা চালু হবে। ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা, ৩০ এপ্রিল রূপগঞ্জ, নরসিংদী, কাঁচপুর এলাকা, ২ ও ৩ মে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার কারখানা চালু করা হবে। কারখানা খোলার ক্ষেত্রে শুরুতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। তবে এখন কোনো শ্রমিক ঢাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসতে পারবেন না কারখানার মালিকরা।
গতকাল রোববার থেকে কারখানা খোলার খবরে অনেক শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কেউ হেঁটে, আবার কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করছেন।
যেখানে ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউন চলছে সেখানে পোশাককারখানা খুলে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পোশাককর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষ কতটা ব্যবস্থা নিতে পারবেন সেটি নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোনো প্রকার শৈথিল্যের সুযোগ নেই। যেকোনো মূল্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পোশাককর্মীদের রক্ষা করতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। কর্তৃপক্ষ পোশাককর্মীদের স্বাস্থ্য রক্ষার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
এইচআর/বিএ/জেআইএম