ধর্ম
হালাল উপার্জনে অনাবিল সুখ
![হালাল উপার্জনে অনাবিল সুখ](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/mahmud-ahmed-motamot-20230526094434.jpg)
ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জনই শ্রেষ্ঠ উপার্জন কিন্তু আজ আমরা সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে এতটাই লাগামহীন হয়ে গেছি যে হালাল-হারাম দেখার যেন সময়ই নেই। যেভাবে পারছি সম্পদ হস্তগত করে ছাড়ছি। বিশ্বনবি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের এমন এক কাল অতিক্রম করবে, যাতে মানুষ এ কথার চিন্তা করবে না, যে সম্পদ উপার্জন করা হচ্ছে তা হালাল না হারাম?’ (মিশকাত)
বর্তমানে আমরা এমন যুগই অতিক্রম করছি। অথচ রিজিকের মালিক হলেন সৃষ্টিকর্তা। তিনি যাকে চান প্রভূত রিজিক দান করেন। আমাদের কাজ হলো তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করা। যেভাবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘তুমি বল, নিশ্চয় আমার রব যার জন্য চান রিজিক সম্প্রসারিত করে দেন এবং সংকুচিতও করে দেন কিন্তু অধিকাংশ, লোক তা জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৬)
ইসলাম এমন একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে সবকিছুর সমাধান বিদ্যমান। একজন মানুষ কেবল তখনই শান্তির ধর্মের প্রকৃত অনুসারী হতে পারে যখন সে আল্লাহর সব নির্দেশাবলির ওপর আমল করে চলে। আল্লাহর নির্দেশাবলির ওপর পরিপূর্ণ আমল করলে রিজিকেরও ঘাটতি হতে পারে না। মূলত আমাদের নিজেদের ভুলের জন্যই সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য হালাল জীবিকার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তই হলো হালাল জীবিকা উপার্জন করা।
আল্লাহর রাসুল (সা.) হালাল রোজগারের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছে হজরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) বলেন, হজরত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে তা বিক্রি করুক এবং তার চেহারা আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করুক। এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম। চাই তাকে দান করুক বা না করুক (মুসলিম) রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে বনু আদমকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। সেই পাঁচটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ অর্ধ হাত পরিমাণ সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। তার মধ্যে একটি হলো- সে কোন পথে উপার্জন করেছে।’ (তিরমিজি)
হালাল উপার্জনের পাশাপাশি রিজিক বৃদ্ধির জন্য আমাদের সবসময় দোয়াও করতে হবে। অভাব মোচনে যে দোয়াটি আমরা অধিক পাঠ করতে পারি- ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলায়না মা ইদাতাম মিনাস সামাই তাকুনু লানা ঈদাল্লি আওওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪) অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদের রিযিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিজিকদাতা।’
আমরা যদি সবসময় দোয়া করি আর হালাল রিজিক ভক্ষণ করি তাহলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল রিজিক ভক্ষণ করল আর সুন্নত মতে আমল করল এবং মানুষ তার কষ্ট থেকে নিরাপদ রইল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এ ধরনের লোক বর্তমানে অনেক। তিনি বলেন, আমার পরে তা কয়েক যুগ পাওয়া যাবে।’ (তিরমিজি)
এছাড়া বেশি বেশি ইস্তেগফার করলেও রিজিক বৃদ্ধি পায় আর অভাব মোচন হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ ও ইবনে) আসলে আমাদের মাঝে যখন অভাব দেখা দেয় তখন আল্লাহর দিকে ঝুঁকি কিন্তু অভাব দূর হওয়া মাত্রই আল্লাহকে ভুলে যাই আর কৃপণতা দেখাই।
আজ বেশির ভাগ পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ আর অশান্তি যেন লেগেই আছে। সংসারে শান্তি নেই, ছেলেমেয়েদের সাথে পিতামাতার সম্পর্ক নেই, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মিল নেই, ফলে প্রতিদিন কতই না সংসার ভেঙে যাচ্ছে। আমি মনে করি পরিবারে অশান্তির কারণগুলোর মধ্যে বিশেষ একটি কারণ হলো অধিক চাহিদা আর হারাম উপার্জন। মানুষের চাহিদা যখন বেড়ে যায় তখন অপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য সে আর হালাল-হারাম নিয়ে ভাবে না। আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই যারা হালাল উপার্জন করে সহজ-সরল জীবন যাপন করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা এমনিতেই স্বল্পে তুষ্ট থাকেন। এদের এতসব চাহিদাও নেই আর পরিবারে সবসময় বিরাজ করে অনাবিল সুখ-শান্তি।
আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি আমাদের আত্মীয়স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখি তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের রিজিকে বরকত দেবেন আর আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দেবেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বোখারি ও মুসলিম)
তাই আসুন, পরিবারে সুখ শান্তির জন্য হারাম উপার্জন ত্যাগ করে হালাল উপার্জন করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের হালাল রিজিক ভক্ষণ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
এইচআর/ফারুক/জিকেএস