গরমে যখন সবাই পালায়, তারা তখনও পথে
ঢাকায় আজ সকাল থেকেই রোদের দাপট। সূর্য যেন মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাস গরম, নড়লেই যেন গায়ে আগুন লাগে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভ্যাপসা অনুভূতি, যেন ঘামে ভিজে শরীর আর মন দুই-ই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। মানুষ যখন বাড়ির শান্ত কোণ, ছায়া ঘেরা বারান্দা কিংবা এসির শীতল পরশে আশ্রয় নিচ্ছে, তখন রাস্তায় দেখা যায় কিছু ক্লান্ত মুখ-ঘামে ভেজা, রোদে পোড়া, তবুও অদ্ভুত রকমের এক দৃঢ়তায় এগিয়ে চলা। তারা কেউ নামহীন, কেউ হয়তো রফিক, সাইদুল বা হাসান। রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাত্রী পৌঁছে দিয়ে তারা চালিয়ে যায় এই শহরের ছন্দ। নিজের ক্লান্তি, পিপাসা, ব্যথা আর কষ্টকে পেছনে ফেলে যে মানুষগুলো শহরের গতি সচল রাখে, তাদের কথা খুব কমই বলা হয়। এই তীব্র গরমে, যেখানে শহর পালিয়ে যায় ছায়ার খোঁজে, সেখানে তারাই রয়ে যায় রাস্তায়। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী; ছবি: মাহবুব আলম
-
রিকশা চালানো এমনিতেই কঠিন কাজ। কিন্তু এই গরমে সেটা যেন আরও একধাপ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যখন সবাই একটু শীতলতার জন্য ব্যকুল হয়ে পরছেন ঠিক তখনই শহরের আনাচে-কানাচে ঘেমে-নেয়ে একেকজন রিকশাওয়ালা ছুটে চলেছেন জীবিকার খোঁজে।
-
এই সময়ে ঢাকার অলিগলিতে পথের পাশে অনেক ছোট শরবতের দোকান দেখা যায়। কারোর প্লাস্টিকের বোতলে রাখা লেবু-জিরা পানি, কারোর হাতে বরফ মেশানো শরবত, কেউ আবার বিক্রি করছেন তাজা ডাব। রিকশাওয়ালারা এসব দোকানের বড় একটি অংশের নিয়মিত ক্রেতা।
-
রিকশাওয়ালারা শুধু শরীরের ঘাম নয়, জীবনের ক্লান্তির সঙ্গেও লড়াই করছেন প্রতিদিন। গরমে আয় কমে যায়, কারণ অনেক যাত্রীই এই গরমে বের হন না। কেউ বের হলেও ভাড়ার জন্য দরদাম করেন বেশি। ফলে গরমে যেমন কষ্ট, তেমনি আয়ও কম।
-
গরমের কারণে শুধু ক্লান্তিই নয়, নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়েন এই রিকশাচালকরা। হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, বমিভাব এসব তো আছেই। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো এদের বড় একটা অংশ এসব বিষয়ে সচেতন নয়।
-
কেউ নিয়মিত পানি খায় না, কেউ খালি পেটে রিকশা চালায়। অধিকাংশের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় না, নেই তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালের দূরত্ব, ব্যয় এবং অজ্ঞতা সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে পড়ে।
-
ব্যস্ত এই শহরের ছন্দে রিকশাওয়ালারা এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের ঘামে ভেজা এই শহর প্রতিদিন গন্তব্যে পৌঁছায়। অথচ তাদের কষ্ট, দুঃখ, ক্লান্তি থেকে যায় অদৃশ্য।