খাঁচায় মাছ চাষে নদী পাড়ে ফিরেছে আশার আলো
নদীর বুকে গড়ে উঠছে নতুন স্বপ্নের জাল। পাবনার বেড়া উপজেলার বৃশালিখা গ্রামে হুরাসাগর নদে খাঁচায় মাছ চাষ করে জীবন বদলের গল্প লিখছেন স্থানীয় মৎস্যচাষিরা। ছবি: আলমগীর হোসাইন
-
স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে অন্তত ২০টি পরিবারের অর্থনৈতিক বাস্তবতা। মাছ চাষ শুধু আয়ের পথই খুলে দেয়নি, গড়ে তুলেছে স্বনির্ভরতার ভিত্তিও।
-
এক সময় সংসার চালানোই যেখানে ছিল দায়, সেখানে এখন নদীর বুক জুড়ে খাঁচা বসিয়ে চলছে তেলাপিয়ার চাষ। ২০২৩ সালে মাত্র ২০ জন হতদরিদ্র সদস্য নিয়ে এই উদ্যোগ শুরু করেন বৃশালিখার মৎস্যজীবী আব্দুল মুন্নাফ। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘পিপিডি’র কারিগরি সহায়তায় গড়ে ওঠে সমবায় ভিত্তিক খাঁচা চাষ প্রকল্প।
-
শুরুর দিনগুলো ছিল সংগ্রামের। কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি ছিল না। হুরাসাগর নদে ২০টি খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষ করে প্রথম ছয় মাসেই সফলতা পেয়ে যান মুন্নাফ ও তার দল। সময়ের সঙ্গে খাঁচার সংখ্যা বাড়ে, বর্তমানে তা ৬০টিতে পৌঁছেছে।
-
এই সফলতা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। উৎসাহিত হয়ে নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আমীর আলীও ঝুঁকেছেন মাছ চাষে। এক সময় লুঙ্গি-গামছার ব্যবসা করা আমীর আলী বলেন, ‘ব্যবসায় লাভ হচ্ছিল না। এখানে এসে দেখি খাঁচায় মাছ চাষে অনেক লাভ। প্রশিক্ষণ নিয়ে আমিও নেমে পড়লাম।’ প্রথম ধাপে ৪০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করে এখন আরও ২০টি খাঁচা বানাচ্ছেন তিনি।
-
নদীর খোলা জলে প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছ দ্রুত বাড়ে, রোগবালাই কম হয়, এমন মত উদ্যোক্তাদের। এই কারণে খরচ তুলনামূলকভাবে কম, আবার বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। ফলে লাভের অঙ্কটা বড়ই হচ্ছে।
-
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, ‘পুকুরের মাছের মতো নয়, খাঁচার মাছ বেড়ে ওঠে নদীর স্রোতে, স্বাভাবিকভাবে। তাই স্বাদেও ভিন্নতা থাকে। তাছাড়া রঙটা পরিষ্কার, আকর্ষণীয়। বাজারে এর চাহিদা বেশি।’
-
চাষিদের ভাষায়, শুরুতে বাইরে থেকে পোনা আনতে গিয়ে অনেক খরচ ও ঝামেলা পোহাতে হতো। কিন্তু এখন নিজেরাই উৎপাদন করছেন মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা। এতে করে একদিকে পোনার মৃত্যুহার কমেছে, অন্যদিকে খরচ কমে গিয়ে লাভ বেড়েছে দ্বিগুণ।