শুভ জন্মদিন টলিউডের অদম্য নায়ক জিৎ
টলিউডে জনপ্রিয়তার আলো ছড়ানো এক নাম জিৎ। পর্দায় তার উপস্থিতি মানেই নায়কোচিত দৃঢ়তা, সৌম্য ব্যক্তিত্ব আর দর্শকের নির্ভরতা। কিন্তু আজকের দিনে জন্ম নেওয়া এই তারকার পথচলাটা এতটা সহজ ছিল না। বরং একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে নিয়মিত পরিশ্রম, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস এবং নিজের ভরসায় এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই জিৎ গড়ে তুলেছেন নিজের আলাদা পৃথিবী। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৭৮ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্ম নেওয়া জিৎ-এর আসল নাম জিতেন্দ্র মদনানী। ব্যবসায়ীক পরিবারে বেড়ে ওঠা এই ছেলেটির চারপাশে অভিনয় কিংবা চলচ্চিত্রের কোনো পরিবেশ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন শান্ত, মনোযোগী এবং ক্রীড়াপ্রেমী। কিন্তু আড়ালে আড়ালে জমে উঠছিল এক স্বপ্ন ‘নিজেকে রুপালি পর্দায় দেখার স্বপ্ন’।
-
জিৎ-এর ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল মডেলিং দিয়ে। তার চেহারার ক্যারিশমা, আত্মবিশ্বাস এবং ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিক আরাম তাকে দ্রুত অন্যদের নজরে নিয়ে আসে। কিন্তু তিনি শুধু ‘মডেল’ হয়ে থাকতে চাননি। অভিনয়ের জগৎই তার প্রকৃত লক্ষ্য। সেখান থেকেই ছোটবড় টেলিফিল্ম, সিরিয়াল, তারপর সিনেমার দিকে যাত্রা।
-
২০০২ সালে ‘সাথী’ ছবির মাধ্যমে বাংলা ছবিতে জিৎ-এর বড় পর্দার অভিষেক আর টলিউডে নতুন যুগের সূচনা-দুটি ঘটনাই যেন একই সঙ্গে ঘটেছিল। ছবিটি ছিল বিশাল হিট। অন্যদিকে রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন জিৎ। দর্শক তার চোখে থাকা আবেগ, অভিনয়ের সরলতা আর প্রেমিক চরিত্রের গভীরতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল।
-
এরপর ‘নাটের গুরু’, ‘শত্রু’, ‘রাজা’, ‘অসুর’, ‘বাজিগর’-একটির পর একটি ছবিতে তিনি প্রমাণ করে গেছেন, বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমাকে তিনি শুধু এগিয়ে নেননি, বরং নতুন ধারার দর্শক তৈরি করেছেন।
-
জিৎ-এর ক্যারিয়ারের বিশেষত্ব হলো বৈচিত্র্য। শুধু রোমান্স বা কমার্শিয়াল হিরো নয়। অ্যাকশন হিরো হিসেবে তিনি নির্ভরযোগ্য, থ্রিলার ছবিতে তিনি রহস্যময় আর শান্ত, পরিবারকেন্দ্রিক চরিত্রে তিনি একদম পাশের বাড়ির মানুষ। যেকোনো চরিত্রে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে তার মধ্যে।
-
অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি প্রযোজক হিসেবেও নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। তার প্রযোজনা সংস্থা জিৎ ফিল্মওয়ার্কস বাংলা সিনেমাকে নতুন গল্প, নতুন টেকনিক ও আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণশৈলী উপহার দিয়েছে। নতুন মুখ, নতুন পরিচালক, নতুন চিন্তা সব কিছুতেই তিনি ভয় না পেয়ে এগিয়ে যান।
-
পর্দায় তিনি সুপারস্টার হলেও বাস্তবে জিৎ খুব শান্ত, সংযত ও পরিবারকেন্দ্রিক একজন মানুষ। স্ত্রী মোহনা মদনানী এবং সন্তানদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভীষণ আন্তরিক। তিনি স্পটলাইটের চেয়ে ঘরোয়া সময়কে বেশি গুরুত্ব দেন যা তাকে আরও মানুষের কাছে টেনে আনে।
-
জিৎ নিয়মিতভাবে সমাজসেবা, দানমূলক কাজ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত। কিন্তু তিনি এসব প্রচার করেন না। কারণ তার ভাষ্য, ‘যা করা হয়, সেটা মন থেকে করা উচিত, প্রচারের জন্য নয়।’-এই সংযম ও মানবিকতা তাকে আরও শ্রদ্ধার জায়গায় নিয়ে যায়।
-
বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমার কঠিন সময়ে জিৎ ছিলেন এক শক্ত ভরসা। তিনি শুধু পর্দায় সাফল্য এনে দেননি, প্রযোজনার মাধ্যমে শিল্পের ভিতও শক্ত করেছেন। আজও কোনো বড় বাজেটের বাংলা সিনেমা ভাবা হয় তার নামকে কেন্দ্র করেই।
-
প্রতি বছর জন্মদিনে তার ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়া ভরিয়ে দেয় শুভেচ্ছায়। স্টারডম অনেকেরই থাকে, কিন্তু মানুষের অন্তরের ভালোবাসা পরিশ্রম, চরিত্র আর মানুষের পাশে থাকার অভ্যাস থেকে জন্মায়। জিৎ সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছেন।
-
জিৎ শুধু একজন নায়ক নয়, তিনি টলিউডের এক যুগের প্রতিনিধি। তার সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রতিটি বড় স্বপ্নের পেছনে থাকে অগণিত শ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের প্রতি অটল বিশ্বাস।