স্টেজ-স্ক্রিন-স্টাইল, জে লো মানেই বৈচিত্র্যের ছোঁয়া
গানের মঞ্চ হোক কিংবা হলিউডের রেড কার্পেট, ফ্যাশন দুনিয়া হোক কিংবা পারফরম্যান্সের স্টেজ-একজন নাম বারবার উচ্চারিত হয় তিনি জেনিফার লোপেজ। বিশ্ব তাকে চেনে ‘জে লো’ নামে। নামটির মধ্যেই যেন এক জাদু আছে। একাধারে গায়িকা, নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী, প্রযোজক, উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন আইকন-জে লো যেন একজন না হয়ে একাধিক সত্তার সম্মিলন। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৬৯ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রঙ্কসে তার জন্ম। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া এই মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সাহসী, স্বপ্নবাজ ও অনন্য। নাচ-গান ছিল তার নেশা। জীবনের শুরুতে অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু তিনি থেমে যাননি।
-
মাত্র ১৮ বছর বয়সে পাড়ি জমান হলিউডে। নাচ দিয়েই শুরু হয় যাত্রা, পরে একে একে জয় করেন অভিনয়, সংগীত ও ফ্যাশনের জগৎ।
-
১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সেলিনা’ ছবিতে কিংবদন্তি লাতিন গায়িকা সেলিনার ভূমিকায় অভিনয় করে জে লো প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন। ওই ছবির সাফল্য ছিল তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া অধ্যায়।
-
এরপর ‘আউট অব সাইট’, ‘শ্যালো’, ‘মেইড ইন ম্যানহাটান’, ‘দ্য বয় নেক্সট ডোর’, ‘হাস্টলার্স’সহ অসংখ্য বক্স অফিস হিট সিনেমায় নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেন তিনি।
-
বিশেষ করে ‘হাস্টলার্স’-এর জন্য তিনি পেয়েছিলেন গোল্ডেন গ্লোব ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন, যা তার অভিনয়জীবনের অন্যতম স্বীকৃতি।
-
২০০০ সালের শুরুতে জে লো যখন সংগীতজগতে পা রাখেন, তখন অনেকেই ভেবেছিল এটা সাময়িক মোহ। কিন্তু তার গানের প্রথম অ্যালবাম ‘অন দ্যা সিক্স’ থেকেই দেখা যায় তার সাংগীতিক প্রতিভার ঝলক।
-
‘ইফ ইউ হেড মাই লাভ’, ‘ওয়েটিং ফর টুনাইট’, ‘লেটস গেট লাউড’ কিংবা ‘লাভ ডোন্ট কস্ট এ থিংঙ্ক’- এমন একের পর এক হিট দিয়ে তিনি জায়গা করে নেন বিলবোর্ড চার্টে।
-
বিশ্বজুড়ে তার অ্যালবাম বিক্রির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৮ কোটির বেশি। তার মিউজিক ভিডিওগুলোতে যেমন থাকে রঙিন আবহ, তেমনি থাকে নারীশক্তির প্রতিচ্ছবি। স্টেজ পারফরম্যান্সেও তিনি অনন্য।
-
২০২০ সালের সুপার বোল হাফটাইম শো-তে যখন শাকিরার সঙ্গে মঞ্চে হাজির হন, তখন গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল জে লো’র নাচ, কণ্ঠ আর কারিশমার দিকে।
-
স্টাইল ও ফ্যাশনের কথা উঠলে জে লো’র নাম না বললে তালিকা অপূর্ণ থেকে যায়। ২০০০ সালের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে তার পরা সবুজ ভের্সাচে গাউনের কথা আজও ফ্যাশন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। এমনকি সেই পোশাক এতটাই আলোড়ন তোলে যে গুগলকে ‘ইমেজ সার্চ’ ফিচার আনতে বাধ্য করে।
-
তার ফ্যাশন সেন্স সবসময় সময়ের চেয়ে এগিয়ে। বোল্ড কিন্তু মার্জিত, গ্ল্যামারাস কিন্তু শালীন-এই দ্বৈততার মধ্যে দিয়েই তিনি সৃষ্টি করেছেন নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল। জে লো’র নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিজস্ব বিউটি ব্র্যান্ড, পারফিউম, অ্যাপারেল লাইন, যা কোটি কোটি নারীর অনুপ্রেরণা।
-
জে লো শুধু বিনোদনের তারকা নন, বরং আধুনিক নারীর এক প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন, একাধারে মা হওয়া, সফল উদ্যোক্তা হওয়া এবং নিজের স্বপ্নের পথ বেছে নেওয়া সবই সম্ভব। বয়স ৫০ পার হলেও তিনি যেভাবে নিজেকে ধরে রেখেছেন, তা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যে নয় বরং তার আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মানসিকতায় ফুটে ওঠে।
-
ব্যক্তিগত জীবনেও জে লো যেন এক রঙিন অধ্যায়। নানা সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, আবার ফিরে আসার কাহিনি ঘিরে থাকে সংবাদমাধ্যম। বিশেষ করে অভিনেতা বেন অ্যাফ্লেকের সঙ্গে তার সম্পর্কের ঘুরেফিরে ফিরে আসা যেন বাস্তব জীবনের প্রেমকাহিনিকেও হার মানায়। ২০২২ সালে তাদের পুনঃবিবাহ বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি করে।