বর্ষায় তেল দিলেই হবে না, জানতে হবে কখন, কীভাবে ও কতক্ষণ
শৈশবের এক মিষ্টি স্মৃতি দাদি কিংবা নানির কোমল হাতে মাথায় তেল দেওয়া। সেই যত্ন আর ভালোবাসা মাখা মুহূর্ত অনেকেরই মনে গেঁথে আছে। তবে বর্ষার আর্দ্র দিনে যদি সেই পুরনো রুটিনে একটু অসাবধানতা ঢুকে পড়ে, চুলের স্বাস্থ্যের জন্য তা হতে পারে বড় বিপদ। বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতা মাথার ত্বকে বা স্ক্যাল্পে এমন এক পরিবেশ তৈরি করে, যা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বৃদ্ধির জন্য আদর্শ। চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময় তেল দেওয়ার পদ্ধতিতে ভুল হলে তা হতে পারে চুল পড়ার কারণ বা গুরুতর ইনফেকশনের সূত্রপাত। ছবি: এআই দিয়ে বানানো ও সোশ্যাল মিডিয়া
-
বর্ষাকালে চুলে তেল দেওয়া যাবে না এই ধারণা ঠিক নয়। বরং সঠিক নিয়মে তেল ব্যবহার করলে বর্ষার দিনে চুলের রুক্ষতা ও স্ক্যাল্পের শুষ্কতা অনেকটাই কমানো যায়। তবে এক্ষেত্রে কিছু জরুরি নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজন।
-
বর্ষাকালে অনেকেই রাতে তেল দিয়ে সারা রাত রেখে দেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। এতে স্ক্যাল্প ভিজে থাকে দীর্ঘ সময়, ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া ঘামে ভেজা বা অপরিষ্কার চুলে তেল দেওয়া যাবে না। এতে স্ক্যাল্পে জমে থাকা ধুলাবালি ও ব্যাকটেরিয়া তেলের সংস্পর্শে এসে দ্রুত ছত্রাকের সৃষ্টি করতে পারে।
-
অনেকে বর্ষায় চুলে তেল দেওয়া কমিয়ে দেন বা পুরো বন্ধ করে দেন। এতে চুল আরও রুক্ষ হয়ে পড়ে। বরং নিয়ম মেনে তেল দিলে স্ক্যাল্পের পুষ্টি বজায় থাকে এবং খুশকি থেকেও মুক্তি মেলে।
-
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে বর্ষায় চুলে তেল দেওয়ার সঠিক ৬টি উপায়: ভারী তেলের বদলে বেছে নিতে পারেন নারকেল, জোজোবা বা আর্গান অয়েল। এই তেলগুলো সহজে শোষিত হয় এবং স্ক্যাল্পে চিটচিটে ভাব ফেলে না।
-
সামান্য গরম তেল ত্বকে দ্রুত মিশে যায় এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। চুল ঘামা বা ধুলোময়লা অবস্থায় তেল দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। পরিষ্কার ও শুকনো স্ক্যাল্পে তেল দিন। আঙুলের ডগা দিয়ে আলতোভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে চুলে টান পড়ে না এবং স্ক্যাল্প রিল্যাক্স হয়।
-
৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার বেশি তেল রাখা প্রয়োজন নেই। দীর্ঘ সময় রাখলে স্ক্যাল্পে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। খুব গরম পানি চুল ও স্ক্যাল্প শুকিয়ে ফেলে। তাই কুসুম গরম পানি এবং সালফেট-মুক্ত মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করাই ভালো।
-
চুলে তেল দেওয়া শুধু বাহ্যিক যত্নই নয়, বরং এটি এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিও বটে। আলতো ম্যাসাজ ক্লান্তি দূর করে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে বর্ষার আর্দ্র ও জীবাণুবহুল আবহাওয়ায় এই ছোট্ট রুটিন যদি ভুলভাবে পালন করা হয়, তবে তা হতে পারে বড় বিপদের কারণ। তাই চুলের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য দুটোই বজায় রাখতে চাইলে বর্ষাকালে তেল ব্যবহার হোক নিয়মমাফিক আর সচেতনভাবে।