শিক্ষা, সাহস আর সহমর্মিতার প্রতিচ্ছবি জিল বাইডেন
রাজনীতির আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো ছায়া নন তিনি। তিনি নিজেই একটি শক্তি, একটি প্রেরণা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা যিনি ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরও পুরোদমে শিক্ষকতা চালিয়ে গেছেন। তিনি ড. জিল বাইডেন। মহিলাদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসার এবং মানবিকতা নিয়ে কাজ করে যাওয়া এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৫১ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের হ্যামন্টন শহরে তার জন্ম। তার পুরো নাম জিল ট্রেসি জ্যাকবস। ছোটবেলায় তিনি পরিবারসহ পেনসিলভানিয়ার উইলো গ্রোভ এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
-
তার বাবা ডোনাল্ড জ্যাকবস ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা, আর মা বোনি জ্যাকবস ছিলেন গৃহিণী। শৈশবে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত, আত্মবিশ্বাসী এবং শেখার ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহী।
-
জিল বাইডেন উচ্চশিক্ষায় বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলেন। তিনি ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়েস্ট চেস্টার ইউনিভার্সিটি এবং ভিলানোভা ইউনিভার্সিটি থেকে দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি নেন।
-
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তিনি ২০০৭ সালে ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘স্টুডেন্ট রিটেনশন ইন কমিউনিটি কলেজেস’ যা সমাজের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
-
জিল বাইডেন জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। তিনি হাই স্কুলে ইংরেজি পড়িয়েছেন, কমিউনিটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন বন্ধুর মতো।
-
এখনো তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ভার্জিনিয়া কমিউনিটি কলেজে একজন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ফার্স্ট লেডি যিনি হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ফুলটাইম শিক্ষকতা চালিয়ে গেছেন।
-
প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৭৭ সালে তিনি বিয়ে করেন জো বাইডেনকে, যিনি তখন সেনেটর ছিলেন। বিয়ের পর তিনি বাইডেনের দুই সন্তান বিউ ও হান্টারকে নিজের সন্তান হিসেবেই লালন-পালন করেন। ১৯৮১ সালে জন্ম নেয় তাদের একমাত্র কন্যা আশলি বাইডেন।
-
জো বাইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে জিল তার পাশে ছিলেন সাহস, উদারতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রতীক হয়ে।
-
জিল বাইডেন ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের পর ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে তার ভূমিকা কেবল নামমাত্র নয়, তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
-
ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব গ্রহণের পর জিল বাইডেন কাজ করেছেন শিক্ষা ও শিক্ষক অধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে, যুদ্ধফেরত সেনা ও তাদের পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে, স্তন ক্যানসার, মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে উদ্যোগে এবং গ্লোবাল গার্লস এডুকেশন নামক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্ব দিতে।
-
ড. জিল বাইডেনের জীবনযাত্রা, কাজ এবং অবদান তাকে বহু সম্মাননা এনে দিয়েছে। শিক্ষকতা ও নারী উন্নয়নে অবদানের জন্য তিনি বহুবার সম্মানিত হয়েছেন।
-
ড. জিল বাইডেন যেন একজন নিঃশব্দ বিপ্লবী। রাজনীতির উচ্ছ্বাসের মধ্যেও তিনি আছেন স্থির, প্রজ্ঞাবান ও সংবেদনশীল। শিক্ষকতা আর মানবিকতার বন্ধনে তিনি যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে অনন্য।