পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত রাঙ্গামাটি
পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা সবুজের ঢেউ, তার মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জলের হ্রদ। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ঠিক এমনই সৌন্দর্যের আহ্বানে মুখর রাঙ্গামাটি। ছুটির ফাঁকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটাতে পর্যটকদের যেন টানে এই শহর। আর তাই রাঙ্গামাটির হোটেল, কটেজ, পর্যটন স্পট সবখানে এখন উৎসবমুখর প্রস্তুতি। অতিথিদের স্বাগত জানাতে হ্রদ-পাহাড়ের এই জনপদ প্রস্তুত হয়ে উঠেছে পুরোপুরি। ছবি: আরমান খান
-
ঈদ উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটিকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটি ও সাজেক। পাহাড়-হ্রদের অপার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছরই অসংখ্য পর্যটক ভিড় করেন এখানে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
-
সংশ্লিষ্টদের মতে, সাজেক ও রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের অভ্যর্থনায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
-
সাজেক রিসোর্ট অ্যান্ড কটেজ মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সাজেকে ৯৮টি কটেজ ও রিসোর্ট চালু রয়েছে। ঈদের ছুটিকে ঘিরে ৫ জুন পর্যন্ত এসব রিসোর্টে প্রায় শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। অনেকেই আগেভাগেই রুম নিশ্চিত করে ফেলেছেন, যেন শেষ মুহূর্তে থাকতে সমস্যা না হয়।
-
রাঙ্গামাটি শহরও পিছিয়ে নেই। এখানে থাকা হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোও পর্যটকদের আনাগোনায় সাড়া ফেলেছে।
-
রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, ‘আমাদের মোটেল ও কটেজে ৮৭টি রুমে প্রায় ১৭০ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে ৯ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও বুকিং আসবে বলে আশা করছি।’
-
রাঙ্গামাটির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত পলওয়েল কটেজ অ্যান্ড ন্যাচার পার্ক। শহরের জিরো পয়েন্টে কাপ্তাই হ্রদের পাড়ঘেঁষা এই স্থানটি ভিউপয়েন্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
-
পার্কটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ১১টি কটেজের সব কটিই ৮ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের জন্য আমরা ফ্রি রাইড চালু করেছি এবং নৌভ্রমণে বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছি।’
-
ঈদের দীর্ঘ ছুটিকে কেন্দ্র করে শুধু আবাসন নয়, নৌপর্যটনেও রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রায় তিন দশক ধরে বোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রমজান আলী জানালেন, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন ঘাটে ৬০০-এর বেশি ট্যুরিস্ট বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি বোটেই পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেট।
-
সাজেক, যা অনেকেই ‘বাংলাদেশের দার্জিলিং’ নামে চেনেন, এবারও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যদিও গত বছরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সাজেকের ৩৮টি কটেজ পুড়ে গিয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ৩টি পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছে।
-
সাজেক কটেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ন দেব বর্মন বলেন, ‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আমাদের কমিউনিটি ক্লাব ও বাসাবাড়িগুলোর অতিরিক্ত থাকার ব্যবস্থা আর নেই। তাই সবাইকে অনুরোধ, বুকিং কনফার্ম করে তারপর যেন রওনা হন।’
-
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে পাহাড়, ঝরনা আর হ্রদের স্নিগ্ধতায় ঘেরা রাঙ্গামাটি-সাজেকে পর্যটকের ঢল নামার প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন। এখন শুধু অপেক্ষা হাজারো প্রাণের মিলনমেলার।