রঙিন মাছের জাদুতে জীবনের রং বদলেছেন সাগর
পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে হাতে খাবার ছুঁড়তেই পানির নিচে যেন এক রঙিন স্বপ্নের আবির্ভাব। গোল্ড ফিশ, কমেট, কই কার্প, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটি কিংবা অ্যাঞ্জেল মাছ নানা রঙে রঙিন একজোড়া চোখ যেন তৃপ্তির হাসি হাসে। এই দৃশ্য এখন গাইবান্ধার সরকারটারী গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. সাগর হোসেনের প্রতিদিনের বাস্তবতা। তার চাষ করা মাছ শুধু চোখের আরাম নয়, জীবনের নতুন সম্ভাবনাও। ছবি: আনোয়ার আল শামীম
-
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পথ। সেই পথের দিশা মিলেছিল করোনার সময় ইউটিউব ঘাঁটতে ঘাঁটতে। হঠাৎই নজরে আসে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও। ভাবনা আসে বাসায় বসেই এমন কিছু করা সম্ভব কি না।
-
মাত্র ৩ হাজার টাকা পুঁজি, কিছু ‘অটো ব্রিড’ মাছ আর অদম্য এক ইচ্ছাশক্তি-এই দিয়েই শুরু করেন সাগর। প্রথমে বিপাকে পড়েছিলেন বাজার নিয়ে। মাছ বিক্রি করবেন কোথায়? চাহিদা আদৌ আছে কি না? সৌভাগ্যবশত একজন আগ্রহী খরিদ্দার সব শুনে মাছ কিনে নেন। সেখান থেকেই শুরু হয় আশার আলো দেখা।
-
চাহিদা দেখে সাহস পান। তবে বড় পরিসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে পরিবারে শুরু হয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তবে হার মানেননি। এক পরিচিতার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে বাড়ান ব্যবসার পরিধি। প্রশিক্ষণ না নিয়েও ইউটিউব দেখে দেখে রেণু উৎপাদন করেন। এরপর ৪৫ শতক জমির পুকুরে শুরু হয় নতুন যাত্রা। পরিবারের সহযোগিতা মেলে। আর সাফল্যও ধরা দেয় হাতে। মাত্র পাঁচ মাসে রঙিন মাছ বিক্রি করে ভালো লাভ হয়। তখন বুঝে যান-এই মাছ শুধু সৌন্দর্য নয়, অর্থনৈতিক মুক্তির পথও।
-
বর্তমানে সাগরের রঙিন মাছের জগৎ অনেক বড়। ৩টি পুকুর ও ১৮টি হাউজ মিলিয়ে উৎপাদন করছেন প্রায় দেড় লাখ মাছ। ২০-২৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে আছে দেশি-বিদেশি নানা রঙিন প্রজাতি। তার মাছ এখন শুধু গাইবান্ধাতেই নয়, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী ছাপিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাতেও।
-
নিজের গড়া ‘সাগর এগ্রো ফার্ম’ ছাড়াও তিনি দেশের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মাছ বিক্রি করছেন। মাসে আয় করছেন ৪০-৫০ হাজার টাকা। রপ্তানির স্বপ্নও দেখছেন এখন। তার ভাষায়, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব।’
-
প্রথমদিকে তাকে নিয়ে অনেকেই হাসিঠাট্টা করলেও এখন তার সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে আশপাশের তরুণরা। রঙিন মাছের এই ক্ষুদ্র জগৎই এখন সাগরের জীবনের বড় স্বপ্ন। যেখানে প্রতিটি মাছ যেন বলছে সাফল্যের পথ চাকরির খোঁজে নয়, সৃষ্টিশীলতার খোঁজে।