বোলিংয়ের জাদুকর, পাকিস্তানের গর্ব ওয়াসিম আকরাম
তাকে বলা হয় ‘সুলতান অব সুইং’। ২২ গজে দাঁড়িয়ে বল হাতে এমন জাদু দেখাতেন, যা শুধু প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকেই নয়, মুগ্ধ করত বিশ্বের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকেও। তিনি ওয়াসিম আকরাম, পাকিস্তান ক্রিকেটের এক জীবন্ত কিংবদন্তি, যিনি গত চার দশক ধরে ক্রিকেট ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক তার ব্যতিক্রমী জীবনের গল্প। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৬৬ সালের এই দিনে পাকিস্তানের লাহোরে তার জন্ম। ওয়াসিম আকরামের বাবা ছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং পরিবারটি ছিল মধ্যবিত্ত। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। স্কুলজীবনে ফুটবল, হকি খেললেও ক্রিকেটই তাকে টেনেছিল সবচেয়ে বেশি।
-
তার শৈশব কেটেছে লাহোরের অলিগলিতে ক্রিকেট বল হাতে। ব্যাট নয়, বরং বল হাতে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার মধ্যেই খুঁজে পেতেন আনন্দ।
-
ওয়াসিম আকরামের প্রতিভা প্রথম নজরে আসে যখন তিনি ১৯৮৪ সালে লাহোরে একটি ট্রায়ালে অংশ নেন। সেই সময়ের কিংবদন্তি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ এবং কোচ আব্দুল কাদির তার অসাধারণ গতির বোলিং দেখে অবাক হয়ে যান। এরপরই তাকে সুযোগ দেওয়া হয় পাকিস্তান জাতীয় দলে।
-
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে, আর টেস্ট অভিষেক হয় সেই বছরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে।
-
ওয়াসিম আকরাম ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত ‘সুইং কিং’ হিসেবে। তিনি ছিলেন রিভার্স সুইং কৌশলের অন্যতম পথিকৃৎ। ইনসুইং, আউটসুইং, ইয়র্কার, স্লোয়ার, বাউন্সার-সবকিছুতেই ছিলেন সিদ্ধহস্ত। একই ম্যাচে বাঁহাতি ও ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে আলাদা পরিকল্পনা ছিল তার অন্যতম শক্তি।
-
ম্যাচ জেতানো বোলার হিসেবে ওয়াসিম ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। টেস্ট হোক বা ওয়ানডে, প্রতিটি ফরম্যাটে তার প্রভাব ছিল দাপুটে।
-
পাকিস্তানের হয়ে ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে ওয়াসিম আকরাম ছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম প্রধান নায়ক। ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার দুইটি জাদুকরী ইনসুইং বল আজও ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ডেলিভারিগুলোর মধ্যে গণ্য হয়।
-
ওয়াসিম ছিলেন একজন সফল অধিনায়কও। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয় পেয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের অনেক তরুণ পেসারের অনুপ্রেরণা। শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনুস, মোহাম্মদ সামিরা তাকে নিজের শিক্ষক বলেই মানেন।
-
তবে তার ক্যারিয়ারে বিতর্কও কম ছিল না। ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে একাধিকবার তার নাম জড়িয়েছিল। যদিও কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি, তবু এ নিয়ে বিতর্ক চলেছে বহু বছর। এছাড়া পিঠের ব্যথা, ইনজুরি তার পারফরম্যান্সে কিছুটা প্রভাব ফেললেও, লড়াই চালিয়ে গেছেন অবিচলভাবে।
-
ওয়াসিম আকরামের প্রথম স্ত্রী হুমা আকরাম ২০০৯ সালে মারা যান।
-
এরপর তিনি ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান সুন্দরী ও প্রেজেন্টার শনিয়েরা থম্পসনকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা করাচিতে বসবাস করছেন এবং তাদের একটি মেয়ে রয়েছে।
-
২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ওয়াসিম কাজ করেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার, কোচ ও মেন্টর হিসেবে বিভিন্ন আইপিএল ও পিএসএল দলে।