গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিলম্বে দেশে সংকট প্রকট হচ্ছে: খসরু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি

দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে সংকট প্রকট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরে খসরু এমন মন্তব্য করেন। ‘স্কুল অব লিডারশিপ’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনসহ বিভিন্ন পেশার নেতারা বক্তব্য দেন।

‘জুলাই পরবর্তী রাজনৈতিক ভাবনা: কোন দিকে হাঁটছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনায় খসরু বলেন, যে সব দেশ বিপ্লবোত্তর সময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে পেরেছে সেগুলো বেঁচে গেছে, ভালো করছে। আর যে দেশগুলো এ সময়ে আমার দাবি-ওর দাবি করতে করতে ঝামেলা করেছে, সেখানে গণতন্ত্র নেই, অর্থনীতি নেই, সমাজও নাই। সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে, সমাজে বিভক্তি চলছে, দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

জুলাই আন্দোলনের পর নির্বাচনহীন এক বছরকে বাস্তবে বেশি সময় উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‌‘আমাদের অনেক আগে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশটার একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডারে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এই না যাওয়ার কারণে দেশ কিন্তু দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে, সংকট প্রকট থেকে প্রকট হচ্ছে।’

কারণ ব্যাখ্যা করে খসরু বলেন, ‘সরকার এখানে, জনগণ ওখানে, মাঝখানে কোনো ব্রিজ নাই। সেই কারণে কী হচ্ছে দেশে? পুলিশ কাজ করছে না, সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করতে পারতেছে না। আইনশৃঙ্খলা নাই, ব্যবসা-বাণিজ্য নাই। মিল-ফ্যাক্টরিতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমি উপস্থিত ওই সামিটে এবং এতে একটা বিনিয়োগও আসে নাই। আসবে না তো। অনেকে যারা উপস্থিত হয়েছে, বেশির ভাগ বর্তমান যারা বিনিয়োগকারী তারাই গেছে ওখানে। আমি তো সবাইকে চিনি, নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। কিন্তু যেই মুহূর্তে নির্বাচনের ঘোষণা এসেছে, এখন কিন্তু নড়াচড়া আরম্ভ হয়েছে। ওই যে ১০৭ জনের জাপানিজ ডেলিগেশন, নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পরে তারা এখন আসছে দেখতে, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নেবে।’

শুধু রাজনীতি নয়, সব খাতে গণতন্ত্রায়ণ হতে হবে জানিয়ে খসরু বলেন, বাংলাদেশে গত ১৫-১৬ বছরে গোষ্ঠীভিত্তিক একটি অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। তখন পৃষ্ঠপোষকতা শুধু যে রাজনীতিতে হয়েছে তা নয়, অর্থনীতিতেও হয়েছে। যার কারণে বাজার ভেঙে গেছে, মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা ধ্বংস হয়ে গেছে।

অর্থনীতির গণতন্ত্রায়ণ বিএনপির একটি বড় স্লোগান জানিয়ে এ নেতা বলেন, ‌‘আপনি খালি রাজনীতিতে গণতন্ত্রায়ণ করবেন আর অর্থনীতি আপনার পকেটে থাকবে, আপনার লোকেরা পকেটে থাকবে, তাহলে গণতন্ত্র কাজ করবে না। অর্থাৎ গণতন্ত্র তখনই কাজ করবে যখন আপনার রাজনীতির গণতন্ত্রায়ণ হবে, অর্থনীতির গণতন্ত্রায়ণ হবে, সমাজের গণতন্ত্রায়ণ হবে, আপনার পরিবারেও গণতন্ত্রায়ণ হতে হবে। তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র কাজ করবে। এই গণতন্ত্রায়ণের অর্থ হলো সকলের জন্য সমান অধিকার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যেক নাগরিককের অংশগ্রহণের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে, সমাজে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকলে সেটাই হবে গণতন্ত্র। আমরা খালি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলাম, এটা একমাত্র গণতন্ত্র না। আমরা যারা রাজনীতি করি, যারা দেশের পলিসির কথা বলি, আমাদের এগুলো ধারণ করতে হবে এবং নিশ্চিতভাবে ডেলিভার করতে হবে। এখন খালি রেটরিকের (বাগাড়ম্বর) মাধ্যমে রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে।’

বিএনপির অর্থনৈতিক কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তু্লে ধরে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য জানান, বিএনপি সরকার গঠন করলে মানবসম্পদ উন্নয়নে জিডিপির ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে। কারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে, লেখাপড়া ঠিক থাকতে হবে। এটি প্রতিটি পরিবারের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। এটি নাগরিক অধিকার। বর্তমানে রাজনীতি বদলে গেছে, আকাঙ্ক্ষা বদলে গেছে। রাজনীতির জবাবদিহি অন্য স্তরে যাবে এবং যাওয়া উচিত। তেমন আগামীর বাংলাদেশই তারেক রহমানের নেতৃত্বে আশা করা হচ্ছে।

কেএইচ/একিউএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।