জাগো নিউজের পর্যালোচনা : তিন সিটিতেই জয় পেতে মরিয়া আ.লীগ
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সালের ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিয়ে ভরাডুবি থেকে সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। গুরুত্বের বিবেচনায় আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নির্বাচন সরকারের জন্য এখন বড় পরীক্ষা।
অপরদিকে, বিএনপিও আন্দোলনের অংশ হিসেবে জয় চায় নির্বাচনে। তবে সবশেষ বেশ কিছু সূচক বিশ্লেষণ করে জাগো নিউজের পর্যবেক্ষণ, শেষ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার দলীয় সমর্থক প্রার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের সমর্থক প্রার্থীকে জয়ের মালা নিশ্চিত করতে সরকারও সে কৌশলে এগিয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রায় দেড় বছরের মাথায় সরকার সিটি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে গত তিন মাস বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে চূড়ান্ত অবস্থানে ছিল। সরকার দেখাতে চাচ্ছে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনসম্পৃক্তা নেই। আর এজন্য জেতার কোনো বিকল্প নেই সরকারের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, জাতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য পাবে সিটি নির্বাচন। এই পরিবর্তন আগামী দিনের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলেন, তারা তিন সিটিতেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ফল সরকারের বিপক্ষে গেলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করতে পারে। তখন সরকারের পক্ষে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করাটা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে আরও বলছেন, সরকার শুধু সিটি নির্বাচনে জয় চেয়ে বসে নেই। সেই ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চেষ্টা করেছে। ভালো ইমেজ এবং পরিচিতি আছেন এমন প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রার্থী নির্বাচনের দৌঁড়ে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ এগিয়ে।
ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি ছিলেন। ব্যবসায়ী মহলেও তার সুনাম রয়েছে। আনিসুল হকের বিপরীতে বিএনপির সমর্থনে মাঠে তাবিথ আউয়াল। তাবিথ আউয়ালের তেমন পরিচিতি নেই। অবশ্য তাবিথ আউয়ালের বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টু হলে সমানে সমানে প্রতিযোগিতার একটি সুযোগ পেতো বিএনপি।
একই ভাবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সাঈদ খোকন অপেক্ষাকৃত তরুণ। তার বাবা ঢাকার প্রথম মেয়র। বাবার পরিচিতি ধরে তিনি অনেকটা এগিয়ে। অন্যদিকে, মির্জা আব্বাস (১৯৯১-১৯৯৩) সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে সুমান নষ্ট করেছেন। ফলে তার জন্য এটি কঠিন পরীক্ষা।
চট্টগ্রামে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আহমেদের বদনামের শেষ নেই। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা রক্ষা করে চলেছেন গত মেয়াদে। তাই বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই তার পক্ষে নেই। অবশ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে বিএনপির উচ্চ কমান্ড প্রথমে সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরিকে সমর্থন দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু, তিনি সিটি নির্বাচন করতে রাজি হয়নি। ফলে চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে থাকছেন।
এদিকে গ্রহণযোগ্য ও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর সুফলও যাবে আওয়ামী লীগের ঘরে। নির্বাচনের তফসিলের পর থেকে ইসির বিতর্কিত ভূমিকা, খালেদা জিয়ার উপর কয়েক দফা হামলা, কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রার্থীর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে কোনো ব্যবস্থা না হওয়াই বলে দিচ্ছে এর সুফল সরকারের ঘরে যাবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বির্তক শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধন্ত নিয়ে পরের দিন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইসি। এর আগে শুধু পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এসএ/আরএস