দেশে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ, চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বনিম্ন : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই নাকি ছুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আওয়ামী নেতার এই বক্তব্য শুনে গোটা জাতি বিস্মিত ও হতবাক। যে বিশেষজ্ঞগণ ‘মৃত্যু-বীজ’ ছড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা কোন বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ সেটাই এখন অনুসন্ধানের বিষয়। এরকম বিশেষজ্ঞ ভারতের মতো দেশে পাওয়া গেল না কেন? সেখানে কেন ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ রাখা হয়েছে? বাংলাদেশে হঠাৎ সব কিছু খুলে দিয়ে আমরা এখন এক কঠিন সঙ্কটের মুখোমুখি।’
রোববার (৩১ মে) এক অনলাইন কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আইএলও’র নির্দেশনা অমান্য এবং করোনা নিয়ে সরকার গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির মতামত সরাসরি অগ্রাহ্য করে সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। গণবিরোধী সরকার কখনওই গণমুখী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সারা বিশ্বের তুলনায় সর্বনিম্ন। করোনা বিস্তারের প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে লকডাউন শিথিলের পরিণতি বিভিন্ন দেশে বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। এটি হিতে বিপরীত হয়েছে। অন্যান্য দেশে করোনা কমে আসার পর লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে পরিণতি হয়েছে সর্বনাশা বিপর্যয়ের। সেখানে নতুন করে ধেয়ে এসেছে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সারা বিশ্বের তুলনায় সর্বনিম্ন। ব্যাঙের প্রতি বাচ্চাদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের খেলার মতো বাংলাদেশ সরকার মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু সংখ্যার মধ্যে গত সপ্তাহে ২৬ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যার মধ্যে গত সপ্তাহে ২৮ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর ওপর সব কিছু খুলে দিয়ে সরকারের ইচ্ছা কী, সারা দেশকে বধ্যভূমি বানানো?’
রিজভী বলেন, ‘এই সরকার যে জনগণের প্রতি বৈরী তার প্রমাণ গতকাল (শনিবার) শতকরা ৮০ শতাংশ বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব। এই করোনা পরিস্থিতিতে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা হবে এই জন্য বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ)। ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ নীতি আওয়ামী সরকারের প্রতিষ্ঠিত কর্মসূচি। জনগণকে জিম্মি করে রক্তচোষার নীতি এদের একমাত্র চালিকাশক্তি। একে তো করোনার আঘাতে জনজীবন মহাবিপর্যয়ের মধ্যে, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এই সপ্তাহে বাঁধ ভাঙা পানির মতো জনজীবনকে গ্রাস করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ’, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর ওপর এই ভাড়া বৃদ্ধি ওই নিরন্ন ও বিপন্ন মানুষের ওপরই কষাঘাত। বাস চালুর আগেই বাসভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেই প্রমাণিত হয়-এই সরকার শোষণ ও গরিবকে মারার যন্ত্র। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন- ত্রাণ নিতে আসা লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তার এই বক্তব্যে ফরাসী বিপ্লবের সময়ে ষোড়শ লুই-এর স্ত্রীর কথাই মনে পড়ে যায়-রুটি নাই তো কি হয়েছে, কেক খাবে। জনগণের ক্ষুধা, হাহাকার, কর্মহীনতা আমলে না নিয়ে সারাক্ষণ এই সরকার জনগণকে নিয়ে উপহাস করতেই ব্যস্ত। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাসভাড়া বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি।’
কেএইচ/এফআর/এমএস