সামনের দিনের রাজনীতি নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত: ড. কামাল

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৩ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২২

ড. কামাল হোসেন। বর্ষীয়ান রাজনীতিক। সভাপতি, গণফোরাম। গত জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।

আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ফের সংলাপের আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। ঐক্য, নির্বাচন, সংলাপ ও রাজনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে ড. কামাল মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। বলেন, সামনের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ফের সংলাপ করছে। আপনার দল গণফোরামও অংশ নিয়েছে। এই সংলাপ আয়োজন নিয়ে বলবেন?

ড. কামাল হোসেন: সংলাপের আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের রুটিনকাজ বলে মনে করি। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আলোচনা করবে, সংকট নিরসনে পরামর্শ নেবে বা দেবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকাণ্ডই আর মানুষ বিশ্বাস করে না। এগুলো লোক দেখানো কাজ বলে মানুষের মধ্যে ধারণা পোক্ত হয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে সংলাপে অংশ নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়ে এসেছে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এদেশে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট করেছি। এজন্য নির্বাচন কমিশনের যা করণীয় তাই করা দরকার।

জাগো নিউজ: স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও সংকট। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় ছয় মাসের শিশু পুলিশের গুলিতে নিহত হলো। জীবনের এই বেলায় এসব ঘটনা কতটুকু পীড়া দেয়?

ড. কামাল হোসেন: দম বন্ধ হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু এমন বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেননি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই আমাদের সংগ্রাম ছিল। অথচ আজ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের কারণে সাধারণ মানুষের অধিকারণ হরণ হচ্ছে।

স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা গেলো না, এর চেয়ে লজ্জা বা দুঃখের বিষয় কী আছে। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে না। ভোট দিতে পারে না। ভোটের কথা, অধিকারের কথা বললে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। এমন সভ্য সময়ে এই নির্মমতা চলতে পারে না।

মানুষ খুব বেশি কিছু সরকারের কাছে দাবি করে না। ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করে। সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করছি। কিন্তু পারছি না।

জাগো নিউজ: না পারায় দুঃখবোধ…

ড. কামাল হোসেন: দুঃখবোধ তো বটেই। আমি সামনের দিনের রাজনীতি নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত। কী ঘটবে বলা মুশকিল। কিন্তু এভাবে একটি সমাজ, রাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না। এর অবসান অবশ্যই হবে। কিন্তু কোন পথে এর সমাধান হবে তাই নিয়ে আমি আতঙ্কিত।

আমি এই শঙ্কা থেকে বারবার ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার কথা বলছি। এর মধ্য দিয়ে নীতি-আদর্শ প্রতিষ্ঠা পায়। শঙ্কা কেটে যায়। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো সমাধানের পথে সত্যিকার মুক্তি আসবে না। এতে আরও ক্ষতি সাধিত হয়। আমরা আর সে ক্ষতি দেখতে চাই না। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ কোনো ধ্বংস ডেকে না আনুক।

জাগো নিউজ: আপনি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলছেন। গত নির্বাচনে ঐক্য গড়লেন। সফলতা নেই বলা হচ্ছে। ব্যর্থতা নিয়ে কী বলবেন?

ড. কামাল হোসেন: আমাদের ব্যর্থতায় ঐক্যের ঘাটতি ছিল। অবশ্যই আমি এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করছি। লক্ষ্য-আদর্শ নিয়ে সঠিকভাবে ঐক্য করলে ব্যর্থ হওয়ার কথা নয়।

জাগো নিউজ: কী ধরনের ঘাটতির কথা বলবেন?

ড. কামাল হোসেন: কোনো আন্দোলন বা পরিবর্তনের জন্য সবার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরি। আমার মনে হয়েছে আমরা এই প্রশ্নে ঠিকঠাক এগোতে পারিনি। নীতি-আদর্শের ভিত্তিতেই লক্ষ্য নির্ধারণ হয়। আমাদের উচিত আগে নীতি-আদর্শ ঠিক করা।

জাগো নিউজ: এই মুহূর্তে সরকারবিরোধী জোটের গুরুত্ব কতটুকু অনুভব করছেন?

ড. কামাল হোসেন: আমরা একটি পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছি। পরিকল্পনা এটিই আমাদের। একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

সরকারের মিশন হচ্ছে কোনো ঐক্য যেন গড়ে না ওঠে। সরকার চায় মাঠের রাজনীতিতে একাই অবস্থান করতে। এ কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা আর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতে রাখছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারলেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
আমরা চলমান পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে না পারলে সরকার যে অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে, তাতে আরও বেসামাল হয়ে পড়বে।

জাগো নিউজ: ঐক্যের প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে নতুন করে কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না?

ড. কামাল হোসেন: এখনো এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি।

জাগো নিউজ: সামনের নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত?

ড. কামাল হোসেন: এখনই বলার সময় আসেনি। আমরা সব পর্যবেক্ষণ করছি। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন পরিস্থিতি কেমন হবে তা পর্যবেক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত নেবো।
আমরা বারবার ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। লেগে থাকার ব্যাপার। সময়ই সব নির্ধারণ করে দেবে বলে বিশ্বাস করি।

জাগো নিউজ: গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিলেন। অভিযোগ রয়েছে আপনি এক প্রকার সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, যার ফসল আওয়ামী লীগ ঘরে তুলেছে।

ড. কামাল হোসেন: এ অভিযোগ আমার কানেও এসেছে। কাজ করতে গেলে সমালোচনা হবে। এ কারণে থেমে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। সেখানে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্ন তোলা অবান্তর।

জাগো নিউজ: আসন্ন নির্বাচনে কী ঘটতে পারে?

ড. কামাল হোসেন: সরকার গত দুটি নির্বাচন একতরফাভাবে করেছে। ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। মানুষ এই অপশাসন থেকে নিস্তার চায়। আমরা চাই দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে সরকার। এখানে সরকারের দায় সবার আগে। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ করানোর জন্য সরকারের ভূমিকা মুখ্য। নির্বাচন কমিশন তার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।

এএসএস/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।