গানে গানে ভোটের প্রচারে নৌকার প্রার্থীরা, সাড়া কম অন্যদের

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সারাদেশে এখন ভোটের আমেজ। ক্ষণ গোনা শুরু হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিনের। সময় যত ঘনাচ্ছে প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগে ততটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন-রাত একাকার করে তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, নিজেদের পক্ষে ভোট চাইছেন। ভোটারদের দিয়ে আসছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

প্রার্থীরা নিজেদের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন। এক্ষেত্রে গানে গানে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সে তুলনায় অন্য দলগুলোর বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাড়া মিলছে কম।

সব মিলিয়ে ঘরের বাইরে কান পাতলেই এখন ভোটের আলোচনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সর্বত্র এখন ভোট নিয়ে মানুষের কৌতূহল। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই ভোটের প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

jagonews24

আরও পড়ুন: ভোটের প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না হেলিকপ্টার 

জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার জন্য গান বা বিজ্ঞাপন রেকর্ড করে থাকেন। গান দিয়ে প্রার্থীরা প্রতিযোগিতার মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দেন। গানে গানে ভোটারদের কাছে তুলে ধরেন নিজেদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং আগামীর প্রতিশ্রুতি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে একই চিত্র। তবে সরেজমিনে ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকের প্রার্থীদের খুব একটা জোরালো অবস্থান চোখে পড়েনি। প্রচার-প্রচারণা ও পোস্টারিং থেকে শুরু করে গান রেকর্ডিং, বিজ্ঞাপন, জনসংযোগ সবকিছুতে ভোটের মাঠে এগিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থীরা।

গানে গানে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সে তুলনায় অন্য দলগুলোর বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাড়া মিলছে কম

এবারে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রেকর্ড সেন্টারগুলোতে নির্বাচনী তেমন আমেজ নেই। নির্বাচনের এই মৌসুমে রেকর্ডের দোকানে প্রার্থীদের পদচারণা কম। নির্বাচন উপলক্ষে গান বা বিজ্ঞাপন রেকর্ডের অর্ডার কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

রেকর্ডিং সেন্টারের মালিকরা বলছেন, গানের জন্য ভয়েস আর্টিস্ট, শিল্পী, সাউন্ড সিস্টেম সব প্রস্তুত রাখা হলেও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতীক বরাদ্দের আগে নৌকার প্রার্থীদের কিছু কাজ তারা পেয়েছেন। তবে গত কয়েকদিন নতুন করে কাজের অর্ডার খুব কমই আসছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গত জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল। গান ও বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণায় চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। এবার বৃহৎ সব দলের অংশগ্রহণ না থাকায় তাদের ব্যবসায়ও ভাটা পড়েছে। নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারণার মাঠে খুব কম দেখা যাচ্ছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: ভরমৌসুমেও মাইক-সাউন্ড সিস্টেম বিক্রিতে ভাটা

রেকর্ডিং ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি গান রেকর্ড করতে সর্বনিম্ন ২০০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন বা অডিও পচারণার জন্য ডুয়েল কণ্ঠে চার হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার টাকা পর্যন্ত নেন তারা। প্রার্থীরা কেমন গান চান সেটি টাকার নির্ভর করে তৈরি করা য়। কেমন ভয়েস আর্টিস্ট চান সেটিও নির্ভর করে টাকার ওপর।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দল ভোটে অংশ নিয়েছে। ৩০০ আসনে ভোটে লড়ছেন মোট ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীরা ঢিমেতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোস্টার সাঁটানো থেকে শুরু করে ভোটারদের দ্বারে যাওয়ায় নৌকার প্রার্থীরাই তুলনামূলকভাবে বেশি সরব। এছাড়া ঢাকার রাস্তাঘাটে প্রার্থীদের গান ও বিজ্ঞাপনের আওয়াজ থাকলেও সেটি অতীতের নির্বাচনগুলোর চেয়ে কম।

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রেকর্ড সেন্টারগুলোতে নির্বাচনী তেমন আমেজ নেই। নির্বাচনের এই মৌসুমে রেকর্ডের দোকানে প্রার্থীদের পদচারণা কম। নির্বাচন উপলক্ষে গান বা বিজ্ঞাপন রেকর্ডের অর্ডার কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা

আওয়ামী লীগ দলীয় একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন আসনে নৌকার প্রার্থীরা দুই-তিনটি করে গান ও বিজ্ঞাপন রেকর্ড করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেক রেকর্ড সেন্টার গান বা বিজ্ঞাপন রেকর্ড করে উপহার হিসেবেও দিচ্ছেন এলাকার প্রার্থীকে।

আরও পড়ুন: ভোটের প্রচারে প্রার্থীরা

নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, গানের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমজমাট হয়। এলাকা সরগরম হয়। ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সব রাজনৈতিক দল প্রচারণায় নামলে আগামী কয়েকদিনে ভোটের মাঠে উত্তাপ আরও বাড়বে।

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও গীতিকা রেকর্ডিং সেন্টারের ডিরেক্টর সন্তোষ কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনে কাজ কম। প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলে আরও কাজ পেতাম। এখন নৌকা ছাড়া যারা আছেন তারা টাকা খরচ করতে চাইছেন না। আমাদের রেকর্ডিং সেন্টার ঐতিহ্যবাহী, তাই কিছু কাজ পাচ্ছি। কিন্তু ছোটখাটো রেকর্ড স্টোরগুলো এখন ভরা মৌসুমেও অলস সময় পার করছে। কাজ না থাকায় তাদের অনেকের ব্যবসায় ধস নামার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

jagonews24

তিনি বলেন, আমি ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য গান লিখেছিলাম। এবার ঢাকায় নৌকার তিন প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্না (ঢাকা-৫), সাঈদ খোকন (ঢাকা-৬) ও মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের (ঢাকা-৭) গান বানিয়েছি। এছাড়া ঢাকার বাইরের প্রার্থীদেরও গান রেকর্ড হয়েছে। আমরা একই গান সব প্রার্থীর জন্য করি না। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য আলাদা গান ও স্ক্রিপ্ট করা হয়।

গুলিস্তান হল মার্কেটের বাজিতপুর রেকর্ড সেন্টারের প্রোপাইটর নুরুজ্জামান সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, পোস্টার সাঁটিয়ে কিছু কাস্টমার পেয়েছি। তবে তা আশানুরূপ নয়। নৌকার প্রার্থীদের যে কাজগুলো পেয়েছি সেগুলো শেষ হয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনে ভোটের চারদিন আগেও কাজ পেয়েছি। এবার ভেবেছিলাম, প্রতীক বরাদ্দের পর কাজ পাবো। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।

প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলে আরও কাজ পেতাম। এখন নৌকা ছাড়া যারা আছেন তারা টাকা খরচ করতে চাইছেন না। আমাদের রেকর্ডিং সেন্টার ঐতিহ্যবাহী, তাই কিছু কাজ পাচ্ছি। কিন্তু ছোটখাটো রেকর্ড স্টোরগুলো এখন ভরা মৌসুমেও অলস সময় পার করছে

আরও পড়ুন: শহরজুড়ে নৌকার পোস্টার, মাঝে মধ্যে দেখা যায় অন্য প্রতীক

ভয়েস অ্যাড বিডির ডিরেক্টর আব্দুল কাদের জিলানী জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হলে রেকর্ডিংও জমজমাট হয়। বিএনপি নির্বাচনে থাকলে আরও কাজ পাওয়া যেতো। ভোটের পরিবেশও অন্যরকম হতো। আমাদের ব্যস্ততাও বাড়তো।

রিদম স্টুডিওর এডিটর শাহাদাত হোসেন রিপন জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনী মৌসুমে একটু বেশিই মুনাফা করার লক্ষ্য থাকে। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী কম থাকায় এবার কাজও কম। প্রচারণায় ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের তোড়জোড় নেই। পূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে কে কার চেয়ে বেশি গান বানাবে, কোন প্রার্থী কত ভালো মিউজিক দিয়ে গান করবে, কে কত ভালো ভয়েস আর্টিস্ট দিয়ে বিজ্ঞাপন বানাবে সেই প্রতিযোগিতা হয়। এবার সেটি কম। এবার যা কাজ হচ্ছে তার বেশিরভাগই নৌকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।

আরএএস/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।