নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় এরাবিক ইফতারি

আরব অঞ্চলের মানুষ সকালে নাস্তা হিসেবে যা খায় তা-ই তারা ইফতারি হিসেবে খেয়ে থাকে। খেজুর ও ঠান্ডা দুধ খেয়ে তারা ইফতারি শুরু করেন। এছাড়া সালাদ, ফল-ফলাদি, জুস, সুপ ও মাছ-মাংসের প্রধান্য একটু বেশি। ভেড়া, মোরগ, গরুসহ অধিকাংশ খাবার তৈরি করে গ্রিল ও বেইকড করে।

কয়েক প্রকারের ঐতিহ্যবাহী ভাতের আইটেম ও মিষ্টি জাতীয় খাবারও থাকে। কোরাআনে বর্ণিত খাবারও যুক্ত থাকে তাতে। নিউইয়র্ক শহরের এস্টোরিয়া এলাকার স্টাইনওয়ে সড়কে বেশিরভাগ দোকান-হুক্কা লাউন্স-রেস্টুরেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের। এ সড়কে প্রবেশ করলে মনে হয় নিউইয়র্কের বুকে এক টুকরো মধ্যপ্রাচ্য।

ঐতিহ্যবাহী এরাবিক ইফতার খেতে খুঁজে বের করা হলো আদেল নামের একটি বুফে ইফতারির বিক্রয় করা রেস্টুরেন্ট। ইচ্ছেমতো অন্তত; কুড়ি প্রকারের খাবার খেতে জনপ্রতি তারা নিয়ে থাকে ৩৫ ডলার।

রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে কোনো খাবার চোখে পড়ে না। বুফে খাবারের পাত্র আছে তবে তা খালি। এক কোনায় দেখি অনেক ধরনের ফল দিয়ে একটি বড় থালা সাজানো। পাশে একটি জুসবার। কমলা, আপেল ও বেরির জুসের সঙ্গে আছে তাদের ঐতিহ্যবাহী গোলাপজল মিশ্রিত তেতুলের জুস।

হুমাস-রুটি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার কাদিফ রয়েছে জুসবারের পাশে। পাশে ভেজিটেবল ও চিকেনের গরম সুপ। ইফতারের সময় বাকি ১৫ মিনিট। বাংলাদেশি রেস্টেুরেন্টের মতো কোনো ভিড় থাকে না। এই সমান্য কিছু খাবার আইটেম দিয়ে ৩৫ দলার নিয়ে নেবে নাকি! শংকায় পড়ে রেস্টেুরেন্টের কর্ণধার আহমেদ মোস্তফাকে জিজ্ঞেস করলাম, খাবার কী এ পর্যন্তই? সব গরম খাবার ইফতারের ৫ মিনিট আগে চুলা থেকে নামিয়ে এখানে আনা হবে।

১২ বছর ধরে ব্যবসা করা প্যালেস্টানি মালিক মোস্তফার কথা মতোই দেখি মানুষ ঠিক ৫মিনিট আগে এসে রেস্টুরেন্ট পূর্ণ করে দিলো। জানা গেলো সবারই আগে টেবিল বুক দেওয়া ছিলো। এ সময় এলো আমাদের দলের কান্তা তার স্বামী কাবির ও কিশোর পুত্র মুগ্ধ।

এই অঞ্চলে গাড়ি পার্কিং পাওয়া কঠিন। তাই আমি, নুরুল আফসার স্টেু ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা শাওন একটু আগে এসেছিলাম। টেবিল বুক করে রেখেছিলাম। বুফে খাবার দেখে আমরা বুঝে গেছি এক জনের পক্ষে সব আইটেম খওয়া সম্ভব না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই পৃথকভাবে ৩-৪টি করে আইটেম চেখে দেখে জানাবো কোন খাবারটি কেমন।

মুগ্ধ জানালো সমুচার মতো দেখতে একটি খাবার এটি সে পছন্দ করেছে। নাম সাম্বুকা। এটি মাংস ও চিজ দিয়ে বেইকড করে তৈরি করা হয়েছে। কাবির হোসেন নিয়ে এলেন সসেজ এর মতো দেখতে লেম গাড। এটি ভেড়ার নাড়ি-ভূড়ির ভেতরে ভাত ঢুকিয়ে বেইকড করা মচমচে একটি খবার।

শাওন আপুর ভালো লেগেছে এরাবীয় ঐতিহ্যবাহী স্টাফ্ড লেম ও গ্রেফ লিফ রাইজ। প্রকৃত খাবারের আকৃতি ঠিক রেখে রন্ধন প্রক্রিয়াকে স্টাফ্ড বলে। বড় আকৃতির ভেড়ার সিনা সঙ্গে বিরিয়ানির মতো ভাত। এতো বড় আকৃতির মাংসের থল কিন্তু খেতে খুব মুলায়েম।

আঙুরের পাতার মধ্যে ভাত দিয়ে স্টাফ্ড প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় গ্রেফ লিফ রাইজ। পাতাকপিও একইভাবে তৈরি করা হয়। কান্তা কাবিরের ভালো লেগেছে তাদের ঐতিহ্যবাহি খবার লেম কাবছা। এটি বিরিয়ানির মতো দেখতে হলেও স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। হোয়াইট ফিস ইন সসেজ ভালো লেগেছে আমার। এটি তাদের ঐতিহ্যবাহি সস, জলপাই,মাসরুম, পেপার ও পেঁয়াজ দিয়ে ওভেনে রান্না করা একটি খাবার। সেন্টু ভাই মতামত না জানিয়ে চলে গেলেন পাশে অবস্থিত বড় একটি মসজিদে নামাজ পড়তে।

মোস্তফা জানালেন এখানে হানিথ নামের একটি খাবার আছে যার কথা কোরআনের সূরা হুদের ৬৯ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মূলত গরুর বাছুরকে এক বিশেষ পক্রিয়ায় মিটির নিচে চাপা দিয়ে রান্না করা হয়। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ নয় এশিয়ান ও আমেরিকানরাও এখানে আসেন ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে। ছোটদের ইফতারি ১৫ ডলার হলেও বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের সম্মান দেখিয়ে এর মূল্য রাখেননি আহমেদ মোস্তফা।

এমআরএম/এমএস