মালয়েশিয়ানদের মুক্তি না দিলে ট্রাম্পকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) অভিযানে আটক মালয়েশিয়ান কর্মীদের মুক্তি না দিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা উমনো ইয়ুথ।
সংগঠনের প্রধান ড. আকমল সালেহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সরকার যদি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ট্রাম্পের কুয়ালালামপুর সফরের সময় দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
ড. আকমল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, যদি আমাদের কর্মীদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে আমরা সরকারকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ বাতিল করার দাবি জানাই। অন্যথায়, মালয়েশিয়ায় তার সফরের প্রতিটি পদক্ষেপই উমনো ইয়ুথের প্রতিবাদে মুখোমুখি হবে। মালয়েশিয়ানদের ওপর হামলা মানে গোটা জাতিকে আঘাত করা।

প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন যে ইসরায়েলি হেফাজতে ১২ জন মালয়েশিয়ান আটক রয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখা হয়েছে এবং এ বিষয়ে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হবে।
আনোয়ার ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে তিনি জনগণকে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য প্রার্থনায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো একটি আন্তর্জাতিক মানবিক মিশন, যার উদ্দেশ্য অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবকরা এই অভিযানে অংশ নেন। কিন্তু এবারও মতো এবারও ফ্লোটিলা ইসরায়েলি বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে।
ইতিহাস বলছে, ২০১০ সালে ‘মাভি মারমারা’ নামের ফ্লোটিলা অভিযানে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হামলায় ৯ জন কর্মী নিহত হন, যা বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। তখন থেকে গাজামুখী প্রতিটি ফ্লোটিলা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ও বিতর্কিত। মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই এসব মানবিক মিশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছে।
মালয়েশিয়ানদের আটক প্রসঙ্গে এখনো পশ্চিমা শক্তিগুলোর সরাসরি অবস্থান পরিষ্কার নয়। তবে তুরস্ক, কাতারসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এরই মধ্যে নিন্দা জানিয়েছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ইসরায়েলি বাধা অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ওএইচসিএইচআর) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে সহায়তা পৌঁছানো আটকানো উচিত নয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলতি মাসে কুয়ালালামপুরে ৪৭তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসার কথা রয়েছে। সফরের মূল আলোচ্যসূচি হবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কূটনৈতিক সহযোগিতা।
তবে ফ্লোটিলা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরে যে রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে, তা ট্রাম্পের সফরের কূটনৈতিক পরিবেশকে জটিল করে তুলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে উমনো ইয়ুথের আন্দোলনের হুমকি এবং অন্যদিকে সরকারের কূটনৈতিক কৌশল মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। যদি ট্রাম্পের সফর ঘিরে গণবিক্ষোভ দেখা দেয়, তবে আসিয়ান সম্মেলনের আলোচনাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
ফ্লোটিলা ইস্যু কেবল মানবিক সংকট নয় বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিলতাকেও উন্মোচিত করছে। ইসরায়েলের অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ার জন্য এটি একটি কূটনৈতিক পরীক্ষা। আগামী কয়েক দিন এই পরিস্থিতি কীভাবে অগ্রসর হয়, তার ওপর নির্ভর করছে ট্রাম্পের সফরের গুরুত্ব ও কূটনৈতিক ফলাফল।
এমআরএম/জিকেএস