মাস্কই টিকার বিকল্প
করোনাভাইরাস চিকিৎসায় যথেচ্ছাভাবে সিটি স্ক্যান করার কারণে নতুন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান বিশেষজ্ঞ ডা. রুমি আহমেদ খান বলেছেন, বাংলাদেশের কোভিডের চিকিৎসায় সমানে সিটি স্ক্যান করা হয়, এমনকি একজনের একাধিক স্ক্যানও করা হয়। এটি একদিকে যেমন অপ্রয়োজনীয়, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতিটি সিটি স্ক্যানে ১০ হাজার এক্সরের সমান রেডিয়েশন মানবদেহে প্রবেশ করে বলে উল্লেখ করে ডা. রুমি আহমেদ বলেন, কোভিড পরবর্তী নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফুসফুসের ক্যান্সারের ‘মহামারি’ দেখা দিতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’র আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই মত দেন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ‘পূবের করোনা, পশ্চিমের করোনা’ শীর্ষক এই আলোচনায় বিশেষজ্ঞ আলোচক ছিলেন ফ্লোরিডায় কর্মরত ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রুমি আহমেদ খান এবং মন্ট্রিয়লের একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত অণুজীব বিজ্ঞানী ড. শোয়েব সাঈদ।
দুই বিশেষজ্ঞই করোনার টিকা বিভিন্ন দেশকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, প্রত্যেকের জন্য টিকা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেককেই যথাযথ নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে মাস্ক বিকল্প টিকা হিসেবে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ডা. রুমি আহমেদ খান বাংলাদেশের ভারতের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, সংক্রমণের বড় ধরনের বিস্তার ঘটা দেশগুলোর তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে ঘনবসতির শহরাঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের দুই দফা সংক্রমণে সিংহভাগ মানুষের মধ্যেই এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। আর গ্রামীণ কাঠামোয় খোলামেলা পরিবেশ থাকায় সেখানে ভাইরাসের বিস্তারের আশঙ্কা কম।
তিনি বদ্ধ ঘরে বিয়েশাদিসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান থেকেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
ড. শোয়েব সাঈদ বলেন, ভ্যাকসিন ব্যবহারের মাধ্যমে পশ্চিমের দেশগুলো এখন অর্থনীতি খুলে দেয়ার আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে পশ্চিমের দেশগুলো অর্থনীতি খুলে দিলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভ্যাকসিন প্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। সেই পর্যন্ত প্রত্যেককে মাস্ক ব্যবহার করে যেতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে বড় ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণার উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, লকডাউনে কার্যকর করা যেহেতু সম্ভব হচ্ছে না, কাজেই মাস্ক এর উপর নির্ভরতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
এমআরএম/জিকেএস