হজরত নুহের (আ.) জাতির অবাধ্যতা ও আল্লাহ তাআলার শাস্তি

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫৭ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
আল্লাহ তাআলা নবি নুহকে (আ.) একটি নৌকা বানানোর নির্দেশ দেন

হজরত নুহ (আ.) মানবজাতির কাছে প্রেরিত আল্লাহ তাআলার একজন সম্মানিত নবি ও রাসুল। আল্লাহ তাআলা তাকে এমন এক জাতির কাছে পাঠিয়েছিলেন যারা শিরকসহ বিভিন্ন পাপ ও অন্যায় কাজে লিপ্ত ছিল। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তিনি তাদেরকে শিরকসহ সব পাপাচার থেকে বিরত থাকার এবং আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত দেন। তাদের হেদায়াতের জন্য তিনি দীর্ঘকাল ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তার জাতির বেশিরভাগ মানুষ ইমান আনেনি।

এক পর্যায়ে তিনি নিজের জাতির বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। ফলে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি একটি নৌকা তৈরি করেন এবং এক মহাপ্লাবন ঘটে। ওই মহাপ্লাবনের পরে পৃথিবীতে শুধু হজরত নুহ (আ.) ও তার নৌকার আরোহী ইমানদার কিছু মানুষ বেঁচে থাকেন। বাকি সবাইকে আল্লাহ তাআলা ধ্বংস করে দেন।

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা হজরত নুহের (আ.) কথা বলেছেন, তার প্রশংসা করেছেন। তার দাওয়াত, প্রচেষ্টা ও তার জাতির অবাধ্যতা, আল্লাহর শাস্তিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বিস্তারিত বিবরণ এসেছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে।

সুরা ইসরায় আল্লাহ তাআলা বলেন, (তোমরা তো) তাদের সন্তান! যাদেরকে আমি নুহের সঙ্গে নৌকায় বহন করেয়েছিলাম, সে ছিল এক শোকরগুজার বান্দা। (সুরা ইসরা: ৩)

সুরা সাফফাতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর নুহ আমাকে ডেকেছিল। আর কি চমৎকারভাবে আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গকে এক মহাসংকট থেকে রক্ষা করেছিলাম। তার বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম। আর আমি তাকে পরবর্তীদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। শান্তি বর্ষিত হোক নুহের উপর সকল সৃষ্টির মধ্যে। আমি এভাবেই সৎকর্ম পরায়নদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। সে ছিল আমার ইমানদার বান্দাদের অন্যতম। অপরাপর সবাইকে আমি ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। (সুরা সাফফাত: ৭৫-৮২)

সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম, নুহ, ইবরাহিমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদের সৃষ্টিজগতের ওপর মনোনীত করেছেন। (সুরা আলে ইমরান: ৩৩)

সুরা হুদ ও ‍সুরা নুহে আল্লাহ তাআলা হজরত নুহ (আ.) ও জাতির ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কীভাবে দীর্ঘকাল ধরে তিনি তার জাতিকে দাওয়াত দিয়েছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে ইহকাল ও পরকালের পুরস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন, আল্লাহর তাআলার শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু তার জাতি আল্লাহর দীন থেকে বিমুখ থেকেছে। অবশেষে আল্লাহর নবি নুহ (আ.) তাদের শাস্তি চেয়ে দোয়া করেন এবং তাদের ওপর আল্লাহর তাআলার ইহকাল ও পরকালের শাস্তি নেমে আসে।

সুরা নুহে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নুহকে প্রেরণ করেছিলাম তার সম্প্রদায়ের প্রতি একথা বলে যে, তুমি তোমার সম্প্রদায়কে সতর্ক কর, তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নির্দিষ্টকাল যখন হবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না, যদি তোমরা তা জানতে!

সে বলল, হে আমার রব! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি; কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করেছে। আমি যতবারই তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, যাতে আপনি তাদের ক্ষমা করেন, ততবারই তারা কানে অঙ্গুলি দিয়েছে, মুখমন্ডল বস্ত্রাবৃত করেছে, জেদ করেছে এবং খুব ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে।

আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি, আমি ঘোষণাসহ প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারে বলেছি। আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।

তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচ্ছনা? অথচ তিনি তোমাদের বিভিন্ন স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন। অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন এবং আবার পুনরুত্থিত করবেন। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা। যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।

নুহ বললো, হে আমার রব, আমার সম্প্রদায় আমাকে অমান্য করেছে আর অনুসরণ করছে এমন লোককে, যার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কেবল তার ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে। আর তারা ভয়ানক চক্রান্ত করছে। তারা বলছে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নসরকে। তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। অতএব আপনি জালেমদের পথভ্রষ্টতাই বাড়িয়ে দিন।

তাদের গোনাহসমূহের কারণে তাদেরকে ডুবিয়ে দেওয়া হলো, তারপর দাখিল করা হলো জাহান্নামে। তারা আল্লাহ তাআলা ছাড়া কাউকে সাহায্যকারী হিসেবে পায়নি।

নুহ আরও বললেন, হে আমার রব, আপনি পৃথিবীতে কোন কাফেরকে রেহাই দেবেন না। যদি আপনি তাদেরকে রেহাই দেন, তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে কেবল পাপাচারী, কাফের।

হে আমার রব! আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে , যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং জালেমদের কেবল ধ্বংসই বাড়িয়ে দিন। (সুরা নুহ: ১-২৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নবি নুহের (আ.) জাতির পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তওফিক দান করুন! আমরা যেন সময় থাকতে তওবা করে ইমান ও নেক আমলের পথ গ্রহণ করতে পারি। আল্লাহর পক্ষ থেকে বার বার সুযোগ পাওয়ার পরও কুফর ও পাপাচারের পথে অটল থেকে আমরা যেন তার শাস্তির উপযুক্ত না হই।

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।