মুসলমানদের আক্বিদা-বিশ্বাস ও কর্মনীতির সুস্পষ্ট বিবরণ


প্রকাশিত: ০৩:৫১ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ক্বিবলা নির্ধারণ করলে আহলে কিতাবের অনুসারীরা (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা) আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে ক্বিবলাকে গুরুত্ব দিয়ে বিতর্ক শুরু করে। তখন আল্লাহ তাআলা ইবাদাতাতের ক্ষেত্রে মুসলমানদের আক্বিদা বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতি কি হবে তা ঘোষণা করেন। শুধু ক্বিবলা নিয়ে মাতামাতিতে কোনো কল্যাণ বা পূন্য নেই বলে উল্লেখ করেন।

বরং যারা ক্বিবলার দিকে ফিরে ইবাদাত করলে পূণ্য হবে, তাদের আক্বিদা বিশ্বাস কেমন হতে হবে; তাদের কর্মপন্থা কেমন হতে হবে; তাদের ধন-সম্পদ ব্যয়ের পদ্ধতি কেমন হবে; বিপদ-আপদ, রোগ-বালাইয়ের পরীক্ষার সময় তাদের অবস্থান কেমন হবে, তা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলেন-

Quran

আয়াতের অনুবাদ-

Quran

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
উল্লেখিত আয়াতটি সুরা বাকারার ১৭৭নং আয়াত। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা পাঁচটি বিষয়ের বিবরণ তুলে ধরেছেন। যা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ ঈমানদার এবং তাকওয়াবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে।

প্রথমত
মুসলমানদের ক্বিবলা নির্ধারণের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে ক্বিবলা পরিবর্তন করে বাইতুল্লাহকে ক্বিবলা করা হলে আহলে কিতাবের অনুসারীরা (ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা) ক্বিবলা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘কোনো দিকে (পূর্ব-পশ্চিমে) মুখমণ্ডল ফিরানোতে কোনো পূণ্য নেই।

দ্বিতীয়ত
আল্লাহ তাআলা মুসলমানের আক্বিদা বিশ্বাস কি হবে তা কুরআনের নির্দেশের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তা হলো ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানোতে তাদেরই কল্যাণ বা পূণ্য রয়েছে, যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে; পরকালে বিশ্বাস করে; ফেরেশতাদের বিশ্বাস করে; তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর কুরআনকে মেনে চলে; সকল নবি-রাসুলদের বিশ্বাস করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করে। তবেই তাদের ক্বিবলার দিকে ফিরে ইবাদাত-বন্দেগিতে পূণ্য হবে।

তৃতীয়ত
আল্লাহ তাআলা তাঁর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয়ের মধ্যে পূণ্য রেখেছেন। যারা ঈমানগ্রহণের পর প্রাণপ্রিয় সম্পদ গরীব আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও অভাবগ্রস্ত ইয়াতিম-মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী এবং দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে যে কোনো ক্রীতদাসকে দান করে। ক্বিবলার মুখ ফিরানো তাদের জন্য পূণ্য রয়েছে।

চতুর্থত
নিজেদের নামাজ পড়ার এবং জাকাত প্রদানের পাশাপাশি সমাজে নামাজ প্রতিষ্ঠা এবং জাকাত আদায়ের কার্যকরী ভূমিকায় পূণ্য রয়েছে। যারা এ কাজ করে তাদের জন্য ক্বিবলার দিকে মুখমণ্ডল ফিরানোয় পূন্য রয়েছে।

পঞ্চমত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানুষ তার কৃত ওয়াদা পালনে একনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, রোগ-ব্যারাম ও ইসলামি বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠায় প্রাণন্তকার প্রচেষ্টার সময় ধৈর্য্যধারণ করে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তাআলা ঘোষিত পূণ্য। আর তারাই হলো সত্যপরায়ন এবং আল্লাহভীরু।

পড়ুন- সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৬

পরিষেশে...
কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত এ গুরুত্বপূর্ণ ১৭৭ নং আয়াতটি মুসলমানের ঈমান তথা আক্বিদা-বিশ্বাসের ভিত্তি এবং সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার মূলনীতি। একজন মানুষকে নামাজি, দ্বীনদার, ঈমানদার, তাকওয়াবান ও পরহেজগার হিসেবে তৈরির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

মহান দয়ালু আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাদের জীবনে উল্লেখিত আয়াতের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। নামাজি, দ্বীনদার, ঈমানদার, তাকওয়াবান ও পরহেজগার হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।