চাহিদার ৮০ ভাগ জিন্স প্যান্ট ও পাঞ্জাবি তৈরি হয় এখানে
প্রায় সারা বছরই ব্যস্ত সময় পার করতে হয় তাদের। দম ফেলার যেন সময় থাকে না ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গা তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কেরানীগঞ্জের পোশাক তৈরির কারিগরদের। এটি দেশের বৃহত্তম বস্ত্রের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুই উৎসব ঈদ কেন্দ্র করে তাদের এ ব্যস্ততা বাড়ে কয়েকগুণ। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যবসায়ী ও পোশাক তৈরির কারখানাগুলোর থাকে বিশেষ পরিকল্পনা। ক্রেতাদের জন্য নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি করেন তারা।
অন্যদিকে ঈদকে সামনে রেখে রমজানজুড়েই কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের কেনাকাটার চাহিদার শীর্ষে থাকে পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, শাড়ি ও থ্রি-পিস। শিশুদের জন্য বাহারি পোশাক।
20170612160321.jpg)
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে পাঞ্জাবি ও জিন্স প্যান্টের যে পরিমাণ চাহিদা আসে তা দেশের মোট চাহিদার অন্তত ৮০ শতাংশ। গতকাল রোববার এখানকার পোশাকপল্লীগুলো ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে মোট ৩০০টি রেজিস্টার্ড মার্কেট এবং এর বাইরে আরও ২০০টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে তিন হাজার রেজিস্টার্ড দোকান এবং আরও প্রায় দুই হাজার দোকান রয়েছে। এসব মার্কেট ও কারখানায় মালিক ও শ্রমিক মিলে অন্তত দুই লাখ মানুষ এবং এর সঙ্গে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট অন্তত চার লাখ মানুষ রয়েছেন।
কেরানীগঞ্জ সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা তীর ঘেঁষে গুদারাঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য পোশাক কারখানা, দোকানপাট ও পাইকারি মার্কেট। এখান থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহনও বেশ সহজ।
20170612160329.jpg)
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে ব্যবসার প্রায় পুরোটাই পাইকারি। এখানকার তৈরি ও আমদানি করা পাঞ্জাবি এবং জিন্স প্যান্টের চাহিদা দেশজুড়ে।
কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারা জানান, এখানকার পাঞ্জাবির গুণগত মান খুবই ভালো। দামও অনেক কম। এছাড়া পাইকারি বাজার হওয়ায় কম দামে পণ্যের বেশি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার কৌশল এখানকার ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের।
রোববার কেরানীগঞ্জ গুদারাঘাট এলাকার মার্কেটগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কর্মচাঞ্চল্যতা বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। দোকানিরা হাঁক ছেড়ে ক্রেতা আকর্ষণ করছেন। শ্রমিকরা কাপড়ের একেকটা স্তূপ মাথায় নিয়ে এক কারখানা থেকে আরেক কারখানায় ছুটে যাচ্ছেন। মানুষ ও পোশাকে আধিক্যের কারণে এ এলাকায় ভ্যান-রিকশা-ঠেলাগাড়ির কদরও বেশ।
কথা হয় ‘বুনন পাঞ্জাবি’র বিক্রেতা জুলহাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে পাঞ্জাবির দাম খুবই কম। ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি মেলে।
20170612160334.jpg)
তিনি বলেন, তার দোকানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি দরে। তবে এবার ব্যবসায় একটু ভাটা পড়েছে। গত বছরের তুলনায় বেচাবিক্রি কম। আশা যা করেছিলাম সে রকম এবার হবে না।
‘জিসান পাঞ্জাবি ঘর’র মালিক মাসুম মিয়া বলেন, ছয়টি পাঞ্জাবি মিলে একটি প্যাকেট করে পাইকারি রেটে বিক্রি করছি। এতে একেকটি পাঞ্জাবির সর্বনিম্ন দাম ১২০ টাকা পড়ে।
তবে দেশীয় কারখানায় তৈরি এসব পাঞ্জাবির বাইরে শেরওয়ানি ও পার্টি পাঞ্জাবির দাম একটু বেশি পড়ে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, জিন্স প্যান্টের দোকানগুলোতেও কর্মব্যস্ততা চরমে। এ মার্কেটে সকাল থেকে রাত অবধি পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে জিন্স প্যান্ট। ভিন্ন কোয়ালিটির জন্য দামেও রয়েছ হেরফের।
‘আলিফ ফ্যাশনস’-এ কথা হয় রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাইকারি দরে জিন্স প্যান্ট সর্বনিম্ন ২২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৬০ টাকা পড়বে। তবে চীনা ও ভারতীয় কিছু প্যান্টের দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, মানসম্মত কিছু জিন্সের দাম বেশি। এসব পণ্য ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সব দোকানেই কমবেশি প্রায় একই চিত্র দেখা যায়।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. স্বাধীন শেখ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে সব ধরনের পোশাক তৈরি ও বিক্রি হয় পাইকারি দরে। এখানকার পাঞ্জাবি ও জিন্স প্যান্টের মান ও বিক্রি সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পাঞ্জাবি ও জিন্স প্যান্টের চাহিদার জোগান দিয়ে থাকে এ মার্কেট।
তিনি বলেন, মানুষ কিনবে না কেন? দামে কম, মানে ভালো। অল্প লাভে আমরা বেশি বিক্রি করছি।
জেইউ/এসআর/এমএআর/আরআইপি