বোনাসের টাকায় বোনের জামা


প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ১২ জুন ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কক্ষের বেশিরভাগ জুড়েই তখন অন্ধকার। উত্তর পাশের একটি মাত্র জানালা দিয়ে আলো আসছে বটে, তাতে অন্ধকার দূর হওয়ার মতো নয়। অমন অন্ধকারেই মাথা নিচু করে কাজ করছে সিয়াম। গোটা কক্ষে তখন সিয়াম একাই শ্রমিক।

বয়স দশের কোটায়। শ্যামলা বর্ণের, অথচ মুখখানা মমতায় ভরা। গোলগাল চোখগুলো মুখটির সঙ্গে একেবারেই মানানসই।

বাড়ি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী। দেড় বছর বয়সে বাবা মারা গেছে। এলাকায় আর থাকা হয়নি মায়ের। বোন থাকে গ্রামে নানীর কাছে। সেখানেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে।

রোববার দুপুর বেলা। প্রচণ্ড গরম। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে সাদিক ফ্যাশন হাউজের একটি কক্ষে বসে যখন কথা হচ্ছিল, তখন মালিকপক্ষের কেউ ধমকের সুরে শাসিয়ে গেলেন শিশু সিয়ামকে।

bonus

উত্তরবঙ্গের কোনো এক জেলা থেকে মালের অর্ডার আছে। দু’দিনের মধ্যে চারশ পিস মাল ডেলিভারি দিতে হবে। কথা বলার সময় নেই কারো।

কাজের ফাঁকে ফাঁকেই খানিক কথা। মা শিল্পী বেগম কাজ করেন কেরানীগঞ্জেই ইসলাম ফ্যাক্টরিতে। মায়ের মাইনে মাসে ছয় হাজার টাকা। সিয়ামের তিন হাজার। থাকে কবুতর পাড়ায়।

এলাকায় কিছুদিন স্কুলে গেলেও নিয়তি আর এগোতে দেয়নি। মায়ের সঙ্গে ঢাকায় এসে দেড় বছর আগে কাজ নেয় কেরানীগঞ্জের এক ফ্যাক্টরিতে। ছয় মাস আগে যোগ দিয়েছে সাদিক ফ্যাশনে।

এবারের ঈদে মালিক বোনাস দেবে, আর সেই আনন্দ যেন সিয়ামের ধরে না। বলে, ‘বোনাসের টাকায় বোনরে জামা দেব। এই ফ্যাক্টরি থেকেই জামা কিনব। মাকে বলেছি। আর মা আমাকে জামা কিনে দেবে বলেছে। ঈদের তিন দিন আগে বাড়ি যাব।’

সাদিক ফ্যাশনের পাশেই ভাই ভাই গার্মেন্টস। বেশ কয়েকটি মেশিন। তার মধ্যে চারজন শিশু মেশিনে পা রেখে পাঞ্জাবি সেলাই করছে। বড়দের পাঞ্জাবি তৈরি হয় এখানে।

bonus

ওদেরই একজন আলী আশরাফ। বয়স ১১, বাড়ি শরীয়তপুরে। মা মারা গেছে দু’বছর আগে। প্রতিবন্ধী বাবা, থাকেন গ্রামে। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে গত বছর।

কাজে যোগ দেয়ার এক বছর হলেও এখনও কোনো মাইনে পায় না আশরাফ। দু’বেলা খাবারটুকু দেন মালিক। ঘুমায় ফ্যাক্টরির মধ্যেই।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে মালিক, তাতেই খুশি সাদিক। বলে, ‘মা মরে গেলে অনেক কষ্ট করেছি। অনেকদিন না খেয়ে থেকেছি। এখন কাজ শিখছি। তাই বেতন দেয় না। কাজ শেখা হলে বেতন পামু।’

এএসএস/এআরএস/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।