একেবারেই ব্যাটিং করতে পারেন না এবাদত হোসেন?

তিনি একজন বোলার। তার নামের পাশে রানের রেকর্ড নিয়ে আলাপ তোলাটাও বেমানান। তবে, টেস্ট ক্রিকেটে বোলাররাও যখন ব্যাট করতে নামেন তখন অনেক সময় প্রতিপক্ষের বোলারদের নাভিঃশ্বাস তুলে দেন। ব্যাট হাতে মাটি কামড়ে বোলাররাও চেষ্টা করেন একজন পুরো দস্তুর ব্যাটার হয়ে ওঠার। কারণ, এটাই দলের জন্য অনেক বড় একটি সহযোগিতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়।
অনেক বোলার তো ব্যাট হাতে ডাবল সেঞ্চুরি করারও রেকর্ড গড়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান সাবেক পেসার জেসন গিলেস্পি বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। মোট কথা, টেস্ট ক্রিকেটে বোলাররাও ব্যাট হাতে কমবেশি অবদান রাখেন।
কিন্তু বাংলাদেশের পেসার এবাদত হোসেন সম্ভবত ব্যাটই ধরতে জানেন না। তার কাজ শুধুই বোলিং করা। ব্যাট হাতে তিনি একেবারেই আনাড়ি। রান করার চিন্তাও তাকে দিয়ে করা যায় না।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এবাদত হোসেনের ব্যাটিং দেখেই এ আলোচনাটা এখন জমে উঠেছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুই টেস্টের চার ইনিংসেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন এবাদত। কিন্তু ব্যাট হাতে তার মাঠে নামাটা ছিল কেবল সংখ্যা গোনার উদ্দেশ্যে। স্কোরবোর্ডে একটি রানও তিনি অবদান রাখতে পারেননি।
চার ইনিংসের প্রতিটিতেই তার নামের পাশে শূন্য। যদিও তিনটিতেই তিনি ছিলেন অপরাজিত। একটিতে আউট হয়েছিলেন। ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে কোনো বলই মোকাবেলা করতে হয়নি এবাদতকে। দ্বিতীয় ইনিংসে মোকাবেলা করেছেন ৬টি বল। দুই ইনিংসেই ছিলেন অপরাজিত।
পোর্ট এলিজাবেথের প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ২ বল এবং দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো বলই মোকাবেলা করার সুযোগ পাননি তিনি। এবাদত অবশ্য বলতে পারেন, ‘আমি তো বলই মোকাবেলা করার সুযোগ পাইনি, রান করবো কী?’
তবে, শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজই নয়, এবাদত হোসেনের এমন রান করতে না পারার ইতিহাস বেশ পুরনো। এখনও পর্যন্ত ১৪টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়েছে ২২টি ইনিংসে। যার ১৮টিতেই কোনো রান করতে পারেননি এবাদত। বাকি ৪ ইনিংসে করেছেন কেবল ৮ রান। সর্বোচ্চ ৪। রান তোলার গড় ০.৮০ করে।
পুরো এক সিরিজে ব্যাট করতে নেমে কোনো রান না করার ঘটনা তিনি ঘটিয়েছিলেন তার অভিষেকেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৯ সালে অভিষেক ঘটে তার। সেবার দুই ম্যাচের চার ইনিংসেই ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনি। এর মধ্যে দুবার ছিলেন অপরাজিত, দুবার আউট হয়েছিলেন। রানের খাতা একেবারে শূন্য।
এরপর ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চার ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও কোনও রান করতে পারেননি তিনি। এবাদতের সংগ্রহ ছিল শূন্য। ওই চার ইনিংসের অবশ্য তিনটিতেই ছিলেন অপরাজিত। অর্থ্যাৎ আউট হননি একবারও।
এবাদতই প্রথম খেলোয়াড়, যিনি একের অধিক টেস্ট সিরিজের সব ম্যাচের দুই ইনিংসেই ব্যাট করেছেন; কিন্তু কোনও রান করতে পারেননি। নিঃসন্দেহে টেস্ট ক্রিকেটে এটা লজ্জার ইতিহাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ২২০ রানে হেরেছিল টাইগাররা। আর দ্বিতীয় টেস্ট তারা হারে ৩৩২ রানে।
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫৩ রান করেছিল। জবাবে মাত্র ২১৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ১৭৬ করে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাব দিতে নেমে মাত্র ৮০ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে বাজে পারফরম্যান্সের পরই মূলতঃ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স উঠে যায় মূল্যায়নের টেবিলে। সেখানেই নজরে আসে, এবাদত হোসেনের একেবারেই ব্যাট করতে না পারার বিষয়টি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তার ব্যাটিংয়ের একই অবস্থা। এখনও পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এবাদত খেলেছেন ৪৩ ম্যাচ। ব্যাট করেছেন ৫৯ ইনিংসে। ২.৪৪ গড়ে রান করেছেন ৮৮। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ১২। লিস্ট ‘এ’র ম্যাচ খেলেছেন ১১টি, রান করেছেন মোটে ১৪।
আইএইচএস/