৩৮ বছর পর ইতিহাসের এক অন্যরকম পুনরাবৃত্তি

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৩০ পিএম, ৩০ মে ২০২৩

প্রেমলাল আর মামুন। তিন যুগের বেশি সময় পর আজ (মঙ্গলবার) পড়ন্ত বিকেলে স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো এই দুই সাবেক ফুটবলারের মুখ। বর্তমান প্রজন্মের কাছে দুজনই প্রায় অচেনা, অজানা।

ঢাকার ক্লাব ফুটবলের অতীতের খুঁটিনাটি খোঁজখবর যারা রাখেন, তারা হয়তো প্রেমলালের নাম শুনে ও জেনে থাকবেন। যিনি আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশকের শুরুতেও শ্রীলঙ্কার এক নম্বর স্ট্রাইকার। ঢাকার ক্লাব ফুটবলেও একসময়ের আলোচিত ফুটবলার।

আবাহনীর হয়ে বেশ সুনামের সাথে খেলে দারুণ দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন প্রেমলাল। হালকা পাতলা গড়নের মাঝারি উচ্চতার প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন এ ফরোয়ার্ডের পায়ের কাজ ছিল অসাধারণ। প্রচন্ড গতির ওপর শরীরের ঝাঁকুনি আর পায়ের কাজে প্রতিপক্ষ মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগে ফাটল ধরাতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। দু'পায়ে ছিল তীব্র লক্ষ্যভেদী শট।

ঢাকাই ফুটবলের আশির দশকের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে বিবেচিত প্রেমলাল। তবে মামুনকে চিহ্নিত করা খুব কম সংখ্যক ফুটবল অনুরাগীর পক্ষেই সম্ভব হবে। কারণ মামুন এখন আর ফুটবলের সাথে নেই। ফুটবল ছেড়ে এখন পুরোদস্তুর ক্রিকেট কোচ। আবাহনীর ক্রিকেট ম্যানেজার।

প্রেমলাল এখন কী করেন? কে জানে? তবে ৩৮ বছর পর ৩০ মে সেই শ্রীলঙ্কান ফুটবল স্ট্রাইকার প্রেমলাল আর গোলকিপার মামুনকে ফিরিয়ে আনলেন মোহামেডানের বিদেশি স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতে আর বদলি গোলকিপার আহসান হাবিব বিপু ।

সেই ফেডারেশন কাপ। সেই আবাহনী-মোহামেডান মহাদ্বৈরথ। আর ইতিহাসের কি অদ্ভুত পুনরাবৃত্তি! আজ কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফিরে এলো ৩৮ বছর আগের স্মৃতি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, খেলায় অনবদ্য হ্যাটট্রিকসহ একাই ৪ গোল করেছেন মোহামেডানের মালির ফরোয়ার্ড সোলেমান দিয়াবাতে। আর পেনাল্টি শুটআউটে আবাহনীর দুই প্রধান বিদেশি তারকা কলিন্দ্রেস ও রাফায়েলের শট আটকে সাদাকালোদের ট্রফি বিজয়ের আনন্দে মাতালেন বদলি গোলকিপার বিপু। মূলত তাদের জোড়া নৈপুণ্যেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ জিতলো মোহামেডান।

ইতিহাস জানাচ্ছে, ৩৮ বছর আগে এই মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথে কায়সার হামিদ, আবুল ও ইউসুফের গড়া মোহামেডান রক্ষণভাগ চিড়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন আবাহনীর তখনকার লঙ্কান স্ট্রাইকার প্রেমলাল। আর টাইব্রেকারে মোহামেডানের একাধিক শট আটকে আবাহনীকে জিতিয়েছিলেন বদলি গোলকিপার মামুন।

১৯৮৫ সালের এক পড়ন্ত বিকেলে দেশের ক্রীড়াকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নায়ক বনে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন প্রেমলাল আর মামুন। সেটা ছিল ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনাল। মোহামেডানকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আবাহনী পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে।

আজ কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে মোহামেডানের জয়ের যৌথ রুপকার ও নায়ক সোলেমান দিয়াবাতে আর বদলি গোলকিপার দিপু।

নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের পর খেলা ৪-৪ গোলে অমীমাংসিত থাকায় পেনাল্টি শুটআউটে ভাগ্য নিষ্পত্তি হয়। অতিকাকতালীয়! আজকের মত সে ম্যাচেরও স্কোরলাইন ছিল ৪-৪।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট আর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটসহ ১২০ মিনিটের তীব্র প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই ৪-৪ গোলে অমীমাংসিত থাকে। সেই ম্যাচেও একবার মোহামেডান, একবার আবাহনী এগিয়ে যাচ্ছিল, চলছিল এমনই লড়াই। পরে টাইব্রেকারে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়।

এবার টাইব্রেকারে আবাহনীর দুই তারকা বিদেশি কলিন্দ্রেস ও রাফায়েলের শট আটকে সাদাকালোদের ১৪ বছর পর আবার ফেডারেশন কাপের ট্রফি উপহার দিলেন বদলি গোলকিপার বিপু।

তবে তার আগে নির্ধারিত ৯০ আর অতিরিক্ত সময়ের প্রায় ২৩ মিনিটসহ মোট ১১৩ মিনিট আবাহনীর ফুটবলারদের অন্তত গোটা তিনেক নিশ্চিত গোলের শট প্রতিহত করে মোহামেডানকে ম্যাচে ধরে রেখেছিলেন একাদশের এক নম্বর গোলকিপার সোহেল।

খেলা শেষ হওয়ার একদম কয়েক মিনিট আগে সোহেল আহত হয়ে মাঠ ছাড়লে বিপু নামেন মোহামেডানের বদলি গোলকিপার হিসেবে। একইভাবে ১৯৮৫ সালে প্রেমলালের হ্যাটট্রিকের ম্যাচে আবাহনীর প্রথম একাদশের গোলকিপারের বদলে শেষদিকে খেলতে নামেন রিজার্ভ গোলকিপার মামুন। পরে মামুনই টাইব্রেকারে হিরো বনে যান। কি অদ্ভুত মিল, তাই না!

এআরবি/এমএমআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।