তিন বন্ধুর সমুদ্র বিলাস

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩১ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

ইমন ইসলাম

বিকেল হতেই আমাদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরে আমি আর আয়াত উপস্থিত। আরিফ তখনও এসে পৌঁছায়নি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে লালরঙা ডাবল ড্রেকার বাসটি।

বাসে উঠতেই চোখ হলো ছানাবড়া। কোথাও কোনো সিট খালি নেই। দাঁড়িয়ে যাওয়ার বিষন্ন ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে গেল, যখন আয়াত উচ্চস্বরে বলে উঠলো আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। অবশ্য প্লানটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে কী কী দেখবেন? 

বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম কোথাও ঘুরতে যাওয়া দরকার। তবে কোথায় যাবো সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তার উপর বন্ধু-বান্ধব যে যার কাজে ব্যস্ত। একা একা কোথাও ঘুরতে যাবো কোনো বন্ধু ছাড়া সেটা কি হয় নাকি।

একবার ভাবলাম একাই যাবো, কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো এসব ভেবে ভেবে মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলাম। যখন এই সব চিন্তায় ব্যস্ত তখন আমার কাছে ভ্রমণে যাবার দারুণ এক সুযোগ এসে গেল। আমার সহপাঠী আরিফকে বিষয়টি শেয়ার করতেই সে রাজি হয়ে গেল।

একই সঙ্গে আরও কয়েকজনকে রাজিও করে ফেললো। গত ১৪ ডিসেম্বর রবীন্দ্র চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হলো। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আমরা ঘুরতে যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি! তা ছিল অজানা। তবুও ঘটা করে প্রকল্পের নামটা দিয়ে বসলাম ‘মিশন কুয়াকাটা’। ঘোরাঘুরির ব্যাপারে আমি একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত।

যেই কথা সেই কাজ। শুরু হলো দল গঠনের কাজ। আরিফকে আহ্বায়ক করে আয়াত, হাসিব, আর তন্ময়কে নিয়ে গঠন করলাম পাঁচ সদস্যের ঘুরন্ত টিম। ঘুরতে যাওয়ার তারিখ ঠিক হলো। আমি রীতিমতো বেশ উত্তেজিত ছিলাম।

আরও পড়ুন: বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ বাড়ি 

ডিসেম্বরের ২০ তারিখ। ক্লাস শেষে একটা খুশির খবর পেলাম। নোটিশ বোর্ডে বড় বড় অক্ষরে টানানো হয়েছে ছুটির নোটিশ। কাল থেকে শীতকালীন ছুটি শুরু। এই দিনটার জন্যই আমি ও আমার টিম অপেক্ষা করছিল।

রাত নামতেই আমাদের পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনেক কথাবার্তা হলো। যাত্রার সময় ঠিক হলো আগামীকাল রাতে। ফাইনালি আমরা মিশন কুয়াকাটায় যাচ্ছি। আলোচনা সভা শেষ করে সবাই হলে ফিরে গেলাম।

সকাল হতেই আমাদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। সাভার নিউ মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে হলে ফিরলাম। হঠাৎ বিপত্তি বাঁধলো। হাসিব যাচ্ছে না। খবরটি জানালো আরিফ। আয়াতকে বিষয়টি জানালাম। ওদিকে তন্ময়ের মুখেও একই সুর শুনে অনেকটাই নিশ্চিত হলাম, যাওয়া হচ্ছে না।

jagonews24

শেষ মুহূর্তে এসে তারা যা জানালো, তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ভ্রমণের স্বপ্নটা যেন ভেঙে যেতে বসেছিল। তবুও আয়াত আর আরিফের একাত্বতা আমার অর্ধ ভাঙ্গা স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখলো।

আরও পড়ুন: শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে কোন কোন স্পটে ঘুরবেন? 

আমাদের ঘুরতে যাওয়ার স্থান পরিবর্তিত হলো। মিশন কুয়াকাটার পরিবর্তে ঠিক হলো মিশন কক্সবাজার। ক্যাম্পাসের বাস বঙ্গবাজারে পৌঁছালো। বাস থেকে নেমে আমরা শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হলের দোকানে রাতের ডিনার করলাম খাসির মাথা দিয়ে। এরপর রওনা হলাম কমলাপুর রেলস্টেশনের দিকে।

যথা সময়েই রেলস্টেশনে পৌঁছালাম আমরা। ট্রেন ছাড়বে ৯টা ২০ মিনিটে। ট্রেনের নাম মহানগর এক্সপ্রেস। দাঁড়িয়ে আছে ৩ নম্বর প্লাটফর্মে। আমি আর আরিফ টিকিট কাউন্টারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আয়াতের উপস্থিত।

তার হাতে টিকিট দেখে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলাম। করুণ স্বরে জানালো আমাদের দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে কী? আমরা যাচ্ছি সেই আনন্দের কাছে সেই কষ্টটা যে বড়ই তুচ্ছ। টিকেট পেয়ে উচ্ছ্বসিত মনে একটা সেলফি তুললাম।

আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ের আরশিনগরে পর্যটকদের ভিড় 

যাত্রা শুরু হলো। ট্রেন চলেছে ঝনঝন শব্দ করে। মনোরম হাওয়া গায়ে মেখে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছনোর মধ্যে যে রোমান্টিসিজম লুকিয়ে আছে, তা একমাত্র ট্রেন যাত্রীরাই বোঝেন। ভ্রমণ সর্বদাই আনন্দের। এই আনন্দের সঙ্গে ভ্রমণে যুক্ত হয় জ্ঞানলাভ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে।’

jagonews24

প্রকৃতপক্ষে ভ্রমণের ফলে মানুষের চিত্ত যেমন প্রফুল্ল হয়, ঠিক তেমনই সে অনেক অজানার সন্ধান লাভ করে। ভোর তখন ৫টা ৪৫ মিনিট। চট্টগ্রাম পাহাড়তলী স্টেশনে ট্রেন থেমেছে। ট্রেন যাত্রীদের দীর্ঘ যাত্রার অবসান ঘটেছে।

অন্যান্য যাত্রীদের মতো আমরাও ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। ট্রেন থেকে নামতেই শীত যেন জেঁকে বসলো। স্টেশন থেকে বের হয়ে অলংকার মোড় পৌঁছালাম। রাস্তাঘাটে যেন শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। আমাদের যাত্রা যেন শেষ হয়েও হয়নি শেষ। এখনো অনেকটা পথ বাকি।

আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজে গিয়ে যা দেখবেন

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে আরও ঘণ্টা চারেক। আমরা সকালের হালকা নাশতা করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথিমধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ঘন কুয়াশায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্য যেন নজর কাড়ে সবার।

বছর ঘুরে ফের শীত আমাদের দুয়ারে। জানাচ্ছে ভ্রমণের হাতছানি। শীতকাল হলো ঘুরে বেড়ানোর আদর্শ সময়। মানসিক প্রশান্তি ও বিনোদনের জন্য মানুষ সারা বছরই ভ্রমণ করে বটে, তবে শীতেই বেশিরভাগ মানুষ ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে শীতের আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য বেশ উপযোগী।

সমুদ্র নামটি যতবার নিচ্ছি মনটা আমার ততবার নেচে নেচে উঠছে। কক্সবাজার পৌঁছাতেই প্রায় দুপুর। হোটেলে চেকিং করেই সবাই বেরিয়ে গেলাম বিচের দিকে। বিশাল বিশাল ঢেউয়ে আমরা সবাই যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম এক অন্যরকম জগতে।

আরও পড়ুন: দার্জিলিং ভ্রমণে থাকার খরচ কমাতে যা করবেন 

সমুদ্রে ঘণ্টাখানেক দাপাদাপি করে ফিরে এলাম হোটেলে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মতো বিশ্রাম নিলাম। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্রসৈকত হলো কক্সবাজার। বিধাতা যেন বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন বালুর আঁচলে।

সমুদ্রসৈকতে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে এলো সাগরের উত্তাল গর্জন। এই সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। সাগর পাড়ে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য সত্যি অপরূপ। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত।

এতো দিন শুধু বইয়ের পাতায় আর টিভির পর্দায় দেখে আসছি। এবার নিজ চোখে দেখবো। ভেতরের উত্তেজনা যেন প্রশমিত হতে চাচ্ছে না। আয়াত ,আরিফ আর আমি বেরিয়ে পড়লাম। পথ-ঘাট কিছুই চিনি না। লোকজন যেখান দিয়ে যাচ্ছে আমরাও সেখান দিয়ে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন: ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড় 

কোনো এক সরু রাস্তা দিয়ে বিচে এসে পড়লাম। আহ মানুষ! সেই আনন্দে আছে। কেউ পানিতে লাফালাফি করছে। কেউ হাঁটছে, কেউ ফুটবল খেলছে, কেউ ওয়াটার বোর্ড রাইডিং করছে, কেউ আবার ঘোড়ায় চড়ে রাইডিং করছে। সমুদ্র বিচে ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের কোলাহল ছিল চোখে পড়ার মতো।

jagonews24

দৃষ্টির সীমানায় শুধুই থই থই জলরাশি। সমুদ্রের গর্জনে মুখরিত পুরো এলাকা। একের পর এক বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আমরা তিন বন্ধু একে অপরকে ধরে ঢেউয়ের সঙ্গে ভাসতে শুরু করলাম। সমুদ্রের স্বচ্ছ নোনা জলে শুরু হলো জলকেলি।

উত্তাল ঢেউয়ে দোল খেতে থাকলাম আমরাও। সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে গেল। হৃদয়জুড়ে এলো স্বস্তির নিঃশ্বাস। সমুদ্রে ঝাপাঝাপি আর স্নান করতে করতে সূর্যটা একসময় পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ল। পরে সমুদ্র তটে এসে আবারও শুরু হলো ফটোসেশন।

বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক ঝিনুক ও নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপণি বিতান, অত্যাধুনিক হোটেল, মোটেল, কটেজ, নিত্য সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেটসমূহ আর পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত প্রাণ-চাঞ্চল্যকর হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: শীতে হিমাচল ভ্রমণে ঘুরে দেখুন জনপ্রিয় ৬ স্পট 

সূর্যাস্তের সময় যেন এক স্বর্গীয় আবহ সৃষ্টি হয় সেখানে। সন্ধ্যার পূর্বলগ্নে সূর্যের আলো সাগরে আছড়ে পড়ছে। গোধূলিলগ্নে রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে চারদিক। মৃদু ঠান্ডা বাতাসে ভাসছে সমুদ্রের গর্জন।

বিচের চারদিকে লোকে লোকারণ্য। দু-নয়ন ভরে দেখছি সব। কোনো আড়ম্বর নেই এখানে, নেই কোনো কৃত্রিমতা। আছে শুধু প্রকৃতির নিজস্ব তুলিতে আঁকা অপরূপ চিত্রপট।

রাতে বের হলাম পাশের মার্কেটের দোকানগুলোতে সাজানো বিভিন্ন জিনিসের পসরা দেখতে। টুরিস্টদের চাহিদার সব কিছুই আছে দোকানগুলোতে। ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্রগুলো চোখে একটু বেশিই লাগে। বিচের পাশের খাবার দোকানগুলোতে কিছু স্পেশাল খাবার পাওয়া যায়।

এসব দুই একটা জায়াগা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। সামুদ্রিক মাছ তাজা কিনে এখানে তাজা খাওয়ানো হয়। স্বাদে অনন্য এসব মাছ। কাঁকড়া খাওয়া দেখে একটু কৌতূহল হলো। কাঁকড়ার দোকানে আয়াত গিয়ে দেখে এলো।

আরও পড়ুন: বিশ্বের যে ৮ দেশে গিয়ে স্থায়ী হতে পারবেন সহজেই 

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আজকের ডিনার করবো সামুদ্রিক মাছ দিয়ে। যে কথা সেই কাজ। একটা কোরাল মাছ, একটা চিংড়ি ও একটা সামুদ্রিক কাকড়া ভাঁজা কিনলাম। এরপর পাশের একটি খাবার হোটেলে পড়টা দিয়ে সামুদ্রিক মাছ খেলাম।

তিনজন মিলে ভাজা কাঁকড়া খেলাম। যা অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। ভাজা কাঁকড়ার স্বাদটা এখনো যেন মুখে লেগে আছে। পরের দিন খুব ভোরে এক সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম বিচের দিকে। আজকে জোয়ার দেখবো। কক্সবাজারে এসে যদি সমুদ্রের জোয়ারে গা না ভেজাতে পারি তাহলে হয়তো অপূর্ণতা থেকে যাবে।

সকালে বিচে লোকজনের আনাগোনাও কম। চারদিকে একটা স্নিগ্ধতা। সকালের নরম বাতাস হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। বিচের মধ্যে আছড়ে পড়া ছোট ছোট ঢেউ শান্তির পরশ মেখে দিচ্ছিলো।

ঢেউয়ের সঙ্গে আসা নানা রকম ঝিনুক আমার চোখ কাড়লো। অনেকগুলো ঝিনুক কুড়িয়েছি হেঁটে হেঁটে। আয়াতের আবার ছবি ওঠার শখ হলো। দাম দস্তুর করেই একজন ক্যামেরাম্যান ঠিক হলো। সমুদ্র বিচে বিভিন্ন পোজে ছবি তুললাম সবাই।

আরও পড়ুন: কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণে কী করণীয়? 

সমুদ্রের পানিতে ভেজার আনন্দটাই আলাদা। তাই তো আরিফ আয়াতের সাথে আমিও ঝাঁপিয়ে পড়লাম সমুদ্রে। যত আনন্দ সব যেন এই পানিতেই।

পরের দিন ভোরে বিচের সৌন্দর্য উপভোগ শেষে হোটেলে ফিরলাম। খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হলো আমরা হিমছড়ি যাবো। পুরা ট্যুরে আমাদের গ্রুপ লিডার আয়াত আর একাউন্স ম্যানেজারের ভূমিকায় আরিফ। আর আমি পুরো সময়টাই যেন ছন্নছাড়া।

jagonews24

মেরিন ড্রাইভ ধরে অটো চলছিলো। রাস্তার একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্র। অল্প সময়ের ভেতরে আমরা হিমছড়ি পৌঁছে গেলাম। এরপর শুরু হলো হিমছড়ি পাহাড়ে উঠার যাত্রা। হিমছড়িতে অবশ্য একটা ঝরনা আছে।

কিন্তু শীতের সময় এই ঝরনাটাতেও পানি থাকে না। পানির ব্যবস্থা অবশ্য কর্তৃপক্ষ করেছিল সেটা শ্যালো মেশিন দিয়ে। হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উঠার সিঁড়ি আছে। কিন্তু এই সিঁড়িগুলো এত বেশি খাঁড়া কিছুক্ষণ চলার পর হাঁপিয়ে যায় মানুষ। এভাবে চূড়ায় উঠলাম সবাই।

আরও পড়ুন: ১০ হাজার কেজি সোনায় তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরীটি কার? 

চূড়ায় ওঠার পরই অসাধারণ দৃশ্য সব ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে। উপরের পাহাড় আর নিচে সমুদ্র এই দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। হিমছড়ির স্পেশালিটি এখানেই। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখা যায়। পাহাড়ের উপর থেকে অন্য পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য দেখা যায়। হিমছড়িতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা হোটেলে ফিরলাম।

রাত নামতেই এবার ছুটলাম বার্মিজ মার্কেটের দিকে। এই মার্কেটে মিয়ানমারের পণ্য পাওয়া যায়। দেশে যতগুলো বার্মিজ পণ্য আছে সব এখানে পাওয়া যায়।

আচার, চাটনি, বিভিন্ন প্রকারের বাদামসহ এখানে বিচিত্ররকমের খাবার পাওয়া যায়। কয়েক প্রকার আচার আর বাদাম কিনলাম। সবাই মিলে পুরা মার্কেট ঘুরলাম। এই মার্কেটই ছিল আমাদের শেষ গন্তব্য।

আরও পড়ুন: একই দেশের অর্ধেক অংশে যখন দিন, বাকি অর্ধেকে রাত 

গভীর রাতে হোটেলে ফিরলাম তিনজন। কাল হোটেল চেক আউট করতে হবে। ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। আমরা তিনজন একটা রুমে ছিলাম।

কে কোন বেডে ঘুমাবে এটা নিয়ে রীতিমত বাঁক যুদ্ধ চলেছে। কার আগে কে জায়গা দখল করে শুয়ে পড়বে এটা ছিলো যুদ্ধের মূল কারণ।

আরেকটি কারণ ছিল ওয়াশরুম নিয়ে। কার আগে কে গোসলে ঢুকবে সেটা নিয়ে যুদ্ধ চলতো। রুম ভাগাভাগিতেও মজা। আমাদের বিদায়েরও সময় হয়ে গেলো। পরিশেষে বলা যায় আমার জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল এই কক্সবাজার ভ্রমণটি।

লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।