আনারসের বাম্পার ফলন, মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ

মো. কামরুজ্জামান মিন্টু মো. কামরুজ্জামান মিন্টু , জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৫
বিষাক্ত হচ্ছে আনারস, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা, ছবি: জাগো নিউজ

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা আনারসের জন্য প্রসিদ্ধ। উপজেলার আনারস স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করা হয়। তবে কয়েক বছর ধরে চাষিরা ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ। অন্য বছরের মতো এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নন। তাই আনারসে ইচ্ছামতো ওষুধ ছিটিয়ে দ্রুত পাকিয়ে ভালো লাভের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে বিষাক্ত হচ্ছে আনারস, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, বিষমুক্ত আনারস চাষে কৃষকদের নানা পরামর্শসহ দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নাওগাঁও, সন্তোষপুর, রাঙ্গামাটিয়া, কৃষ্ণপুর, কালাদহ, পাহাড় অনন্তপুর ও হাতিলেট এলাকায় প্রচুর আনারস চাষ হয়। এবারও চাষ হচ্ছে। অনেক কৃষকের ক্ষেতে আনারস কাঁচা আবার অনেকের ক্ষেতে আনারস পেকে গেছে। কাঁচা আনারসগুলো পাকিয়ে দ্রুত বাজারে তুলতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব আনারস খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও তা বন্ধ হচ্ছে না।

আনারসের বাম্পার ফলন, মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ

কৃষকদের দাবি, কতটুকু রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হবে, তার সঠিক জ্ঞান না থাকায় মনমতো রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে ক্ষেতের সব আনারস একসঙ্গে দ্রুত পেকে যায়। পাইকারদের কাছে অনেক আনারস একসঙ্গে বিক্রি করা যায়। অনেক কৃষক আনারস পাকার আগেই পুরো খেতের কাঁচা আনারস পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। অসাধু পাইকাররা ক্ষেতের সব আনারস দ্রুত পাকাতে শ্রমিকদের মাধ্যমে ইচ্ছামতো রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন। আনারসগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করে পাইকারদের পকেট ভারী করা হচ্ছে।

উপজেলার নাওগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা দেরীতে চারা রোপণ করেছিলেন; তাদের আনারস এখন বড় হয়েছে। তাই দ্রুত পাকিয়ে বিক্রি করতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে বিপণন ব্যবস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।’

রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের আনারস চাষি ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে অনুযায়ী আনারসের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পাইকাররা লাভবান হচ্ছেন। অনেকে আনারসে ইচ্ছামতো রাসায়নিক প্রয়োগ করলেও আমি কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বালাইনাশক স্প্রে করি।’

একই গ্রামের আরেক চাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাইকারের কাছে ২ একর জমির আনারস বিক্রি করে দিয়েছি। পাইকারই তাদের কর্মচারীর মাধ্যমে আনারসে ইচ্ছামতো কেমিক্যাল প্রয়োগ করছেন। এতে আমার কোনো দোষ নেই।’

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৃষকেরা জলডুবি, হানিকুইন ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ করেন। মাটি ও আবহাওয়া আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বাম্পার ফলন হয়। চলতি মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। মুক্তাগাছা উপজেলায় ২০ হেক্টর ও ভালুকায় অল্প পরিমাণে আবাদ করা হয়েছে। একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে চলতি মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০০ পিস আনারস রপ্তানি করা হয়েছে। আগামীতে বেশি পরিমাণে অন্য দেশেও রপ্তানি করা হবে। আনারসে ইচ্ছামতো ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার না করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কৌশিক দেব বলেন, ‘আনারসে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আনারসসহ যে কোনো ফল খেলে মানবদেহে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, লিভার ও কিডনি রোগসহ অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই।’

আনারসের বাম্পার ফলন, মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ

ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আনারস লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচিত। অনেকে পাকার আগেই পাইকারদের কাছে পুরো জমির আনারস বিক্রি করে দেন। আনারসে মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার না করতে চাষিদের বলা হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘আনারস খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। খাওয়ার পর কেউ অসুস্থ হলে পরে আর খেতে চাইবেন না। ধীরে ধীরে আনারসের ক্রেতা কমবে। যথাযথ নিয়ম মেনে আনারস উৎপাদন করতে হবে। বিষমুক্ত আনারস চাষ করতে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।’

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।