এবার ৬ দফা দাবি পেশ করলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) বন্ধ ঘোষণা এবং হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে এবার ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো হলো- ১. অবৈধভাবে হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে।

২. হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে।

৩. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টোরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।

৪. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

৫. হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ: কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার, তোফাজ্জল স্যার, শরীফ আর রাফি স্যার, কামরুজ্জামান স্যার, পশুপালন অনুষদের বজলুর রহমান মোল্যা স্যার, জেনেটিক্সের মুনির স্যার, ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের আশিকুর রহমান স্যার এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. গত ১ মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এবার ৬ দফা দাবি পেশ করলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুল হক হিমেল সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান।

তিনি বলেন, এই ছয় দফা দাবি দ্রুত মেনে না নিলে পুরো বাকৃবি লকডাউন এবং ব্ল্যাকআউট করে দেওয়া হবে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।

এর আগে সকালে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কে.আর মার্কেটের আশপাশে জড়ো হন।

রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশেপাশে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টায় একই মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রি ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং দুই অনুষদের সমন্বয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি; এই তিনটি ডিগ্রিই থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা তিন ডিগ্রি মেনে নেননি। তারা এক পেশায় এক ডিগ্রি তথা কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান।

ফলশ্রুতিতে দুপুর দেড়টার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আশানুরূপ না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে একত্রে অবরুদ্ধ করে তালা লাগিয়ে দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষক অবরুদ্ধ হন।

শিক্ষকদের ৬-৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর দ্বিতীয়বারের মতো একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। এর কিছুক্ষণ পর বহিরাগতদের একটি মিছিল লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিছুটা কিছু হটেন। বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলা চলাকালে ক্যাম্পাসের শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন মিলনায়তনে অবরুদ্ধ শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পেছনের দরজা দিয়ে নিরাপদে সরে যান।

এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বহিরাগতদের হামলায় এক নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ ক্যাম্পাসে শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন মিলনায়তন ও ভিসির ভবনে হামলা ও ভাঙচুরসহ তাণ্ডব চালান।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।