ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতাই এ দেশকে পিছিয়ে নেবে: ধর্ম উপদেষ্টা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতাই এ দেশকে পিছিয়ে নেবে। চেয়ারে কেউ একবার বসলে সে আর ছাড়তে চায় না। আমরা তৈরি হয়ে আছি। যেহেতু ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন, নতুন সরকার শপথ নিলেই আমরা বিদায় নিয়ে চলে যাবো। আমাদের মধ্যে কোনো দুঃখবোধ নাই। যতটুকু আল্লাহ তায়ালা সুযোগ দিয়েছেন, কাজ করে যাচ্ছি।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে আরবি বিভাগের আয়োজিত ’আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনা সভায় আরবি ভাষার গুরুত্ব উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আরবি ভাষা কেবল ধর্মীয় কারণে নয়, বরং অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অসংখ্য মাদরাসা ও আরবি বিভাগ থাকা সত্ত্বেও দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। আমি সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাবো শিক্ষার্থীদের আরবির দক্ষতা বাড়াতে, কারণ দক্ষ আরবি শিক্ষার্থীদের জন্য পুরো বিশ্বের দরজা খোলা।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আরবি ভাষা পৃথিবীর প্রায় ২৫টিরও বেশি দেশের সরকারি ভাষা। এ ভাষার গুরুত্ব অনেক। ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, কূটনীতিক, বাণিজ্যিক, শ্রমবাজার ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে আরবি ভাষার চাহিদা ব্যাপক। যে দেশগুলো ফ্রান্সের কলোনি ছিল, সেসব দেশে আজও সাহিত্য-সংস্কৃতির ভাষা হিসেবে আরবি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। আরবি বিভাগে যারা পড়েন, তাদের জন্য পুরো বিশ্বের স্কলারশিপের দরজা খোলা।

তিনি বলেন, আমার একটা রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু যেই মাত্র আমি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টার চেয়ারে বসেছি, আমার কোনো দলীয় পরিচয় নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিনত হবে? আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি, রাজনীতির বাইরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয় নাই। এইটা একটা দুঃখজনক লিগ্যাসি। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমনটা নাই। তবে, আমরা আশা রাখি, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে ইনশাল্লাহ।

এসময় ধর্ম উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের ২৫ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি চবি ক্যাম্পাসে একটি ‌‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্নার’ প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একটা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্নার করতে চাই। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা অর্থায়ন করবো।

আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের সভাপতিত্ব এবং বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ফরিদুদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল শাহীন খানসহ আরও অনেকে।

এসময় আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অবদান এবং আরবি শিক্ষায় স্কলারশিপ প্রদান ও আরবি গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য চবির আরবি বিভাগের পক্ষ থেকে ৩২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিভাগটি থেকে তিনি ১৯৮২ সালে বিএ (সম্মান) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাশ করেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা’ বিষয়ের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি চবির শাহজালাল হলের ১০৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার রুমমেট ছিলেন ইসলামিক স্কলার অধ্যাপক ড. আ ক ম আবদুল কাদের।

সোহেল রানা/কেএইচকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।