একযুগ পর বন্ধুদের মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। পড়ালেখা শেষ করে অনেকেই চাকরি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যস্ত। কেউবা দূরপ্রবাসে। বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ যখন বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে, তখন ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে এক ভিন্ন পথ ধরেন ওই ব্যাচেরই এক বন্ধু।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় একযুগ পর ঢাবির মিলন চত্বরে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। এসময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, ছবি তোলা, সেল্ফি, আড্ডা, গল্প, নাচ, গানে মেতে উঠেন।

‘বন্ধুত্বের একতা, সম্প্রীতি ও সফলতা’ সেশনটির অপর এক শিক্ষার্থী ওবায়দুল হকের দেওয়া এই স্লোগানকে ধারণ করে সবার মধ্যে বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা সৃষ্টির পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে গ্রুপটি। এছাড়া প্রয়োজনে সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য কিছু করার চেষ্টা নিয়েও বন্ধুত্বের বন্ধনটা সুদৃঢ় করতে মিলনমেলার আয়োজন করেছে ঢাবির ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের বন্ধুরা।

du1.jpg

মিলনমেলায় কক্সবাজার, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে যুক্ত হয় বন্ধুদের আড্ডায়। প্রায় শতাধিক বন্ধুর আগমনে ক্যাম্পাসের সেই পুরো দিনের আড্ডায় ফিরে যান তারা। সবার আগ্রহ ও আন্তরিকতাকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন গ্রুপটির পরিকল্পনাকারী রাসেল মাহমুদ।

রাসেল জানান, বন্ধুরা একে অপরের থেকে যেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই ও সবাই যেন বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারি সেই চিন্তা থেকেই গ্রুপটি খুলেছিলাম। গত ৫ বছরের মধ্যে গেল বছর করোনাকালে আমাদের এক বন্ধুর চরম শঙ্কটে পাশে দাঁড়ানোসহ অপর এক বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেরই এক ছোট ভাইয়ের অসুস্থতায় আর্থিক সহযোগিতা করতে পেরেছি।

এছাড়া বিভিন্ন তথ্য ও সহযোগিতায় কাজ করাসহ রক্তদানে সহযোগিতা করা হয়েছে বন্ধুদের। আমাদের বন্ধুদের আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ ছিল। মিলনমেলার মধ্য দিয়ে একটি বড় পরিসরে আয়োজন করার জন্য প্রতিটি হলে বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ আছে ও সবার আস্থাভাজন এমন বন্ধুদের একত্রিত করা হবে। বন্ধুত্বের একতা আর সম্প্রীতিটাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

মিলনমেলায় অংশ নিতে বিকেল থেকেই মিলন চত্বরে আসতে থাকে ‘বন্ধু চিরকাল (ঢাবি: ২০০৯-১০)’ এর বন্ধুরা। রফিক, রেজা, রাসেলসহ বেশ কয়েকজনের আয়োজনে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই উপস্থিত হয় শতাধিক বন্ধুরা। মিলনমেলায় এসে ভালো লাগার কথা জানান অনেকেই। এসময় কথা হয় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করা ফারজানা লুনার সঙ্গে।

তিনি জানান, আমি এখানে কাউকেই চিনি না। শুধু এটুকুই জানি সবাই ২০০৯-১০ সেশনের বন্ধু। সবাই আমার কাছে নতুন মুখ, নতুন বন্ধু। মিলনমেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে।

du1.jpg

ছাত্র কিংবা ও শিক্ষক হিসেবে ক্যাম্পাসে সময় কাটানো ভিন্ন এক অনুভূতি। দীর্ঘদিন পর ছাত্র জীবনের আড্ডা মিস করতে চান না। বন্ধুদের মিলনমেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক মাহাদী হাসান জানান, আমার এক আত্মীয়ের রিসিভশন আবার এখানেও বন্ধুদের মিলনমেলা। কোনোটাই মিস করতে চাই না। তাই এখানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেই চলে এসেছি।

বন্ধুত্বের টানে এসেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রায় অর্ধযুগ আগে পড়ালেখা শেষ করে জনতা ব্যাংকের অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে নওগাঁ জেলায় কর্মরত আশরাফুল আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বন্ধুদের আড্ডায় যুক্ত হতে পেরে বেশ খুশি তিনি।

মিলনমেলা আয়োজনে কাজ করা রফিকুল ইসলাম জানান, বন্ধুরা মিলে একটি হাঁস পার্টির আয়োজন করেছি। সবাই বেশ সাড়া দিয়েছে। সবাই মিলে আড্ডা, গল্প, খাওয়া-দাওয়া, নাচ, গান করেছি। এই যেন ক্যাম্পাস জীবনেই ফিরে গিয়েছিলাম। বেশ ভালো সময় কেটেছে।

ব্যক্তিস্বার্থ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বর্তমান বাস্তবতায় নিজের মধ্যে বন্ধুত্ব আর ঐক্য চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থীরা। এতে শঙ্কটে বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানোসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের মানুষের জন্য কাজ করতে চায় তারা।

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো স্মৃতির মেলবন্ধনকে ধরে রাখতেই ২০১৭ সালে ২ জানুয়ারি ‘বন্ধু চিরকাল (ঢাবি: ২০০৯-১০)’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন সাবেক শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ। সেশনটির দুই হাজারেরও বেশি বন্ধুরা গ্রুপে যুক্ত হন। যাদের অনেকেই এখন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ নানা পেশায় দেশ ও বিদেশে কর্মরত।

আরএসএম/এমআরএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।