জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের ‘প্রোগ্রামে না থাকায়’ কান ধরানো-মারধরের অভিযোগ

রাজনৈতিক কর্মসূচি ও গেস্টরুমে অনুপস্থিত থাকায় এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও তিনজনকে কান ধরে বসে রাখার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রলীগের ৯ কর্মীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ২টার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ২১৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ফারাব্বি পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র।
অভিযুক্তরা হলেন ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আহমেদ আক্তার উৎস ও সালেক ইবনে ইউসুফ কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইমরান মির্জা এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত।
লিখিত অভিযোগে ওই ভুক্তভোগী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে প্রেসিডেন্ট ব্লকের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সিনিয়ররা পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তাদের রুম ২১৯ এ যেতে বলেন। সেখানে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময় অন্য বন্ধুদের রুমে কান ধরে বসিয়ে রাখেন। আমাকে ডেকে নিয়ে জানতে চান বিভিন্ন সময়ে গেস্টরুমে কেন আসিনি, পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে কেন ছিলাম না। আমি কারণ উল্লেখ করলে তারা রেগে যান এবং অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শার্ট খুলতে বলেন। আমি এতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন এবং হল ত্যাগ করতে বলেন। পরে ওই রাতেই আমাদের রুমে তালা লাগানো হয়। আমরা হলের গেস্টরুমে রাত কাটাই।
ভুক্তভোগী ফারাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, “পরীক্ষা এবং পরবর্তীতে ট্যুর থাকায় ছাত্রলীগের বেশকিছু প্রোগ্রামে থাকতে পারিনি বলে তাদের জানিয়েছিলাম। এতে তারা উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন। আমার তিন রুমমেটকে কান ধরে ‘মুরগি বানিয়ে’ রাখেন। প্রায় দেড়ঘণ্টা তারা এভাবে নির্যাতন করেন। পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না থাকলে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন তারা।”
জানতে চাইলে অভিযুক্ত জুনায়েদ হাসান রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগকারী একজন মাসকাসক্ত। কয়েকদিন আগে সে তার এক রুমমেটকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে এবং অন্যদের সঙ্গে অসংলগ্ন আচরণ করে। তার ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের কাছে অভিযোগ করায় তাকে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছি। মারধর বা নির্যাতনের যে অভিযোগ আসছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা।’
জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ছাত্রলীগ অন্যায় ও নির্যাতনকে প্রশ্রয় দেয় না। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। যে অভিযোগটি এসেছে তা তদন্ত করে প্রমাণসাপেক্ষে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই ছাত্র সেদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমাকে ফোন দেয়। আমি তাকে দেখা করতে বলি। অভিযোগপত্র আজ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
মাহবুব সরদার/এসআর